ঢাকা ০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম
Marriage Notice দূর্নীতির বহুমাত্রিক অভিযোগ জাতীয় গৃহায়ণ প্রশাসকের বিরুদ্ধে ২০২৬ সালে যাত্রা শুরু করছে ‘ডা: ইদ্রিস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল’ পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ এক লটে ৭০৩ সরঞ্জাম: দরপত্রে ক্রয় আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ সাজানো মিথ্যে মামলায় জেল হাজতে খোকন সেখ: ফরিদ গঞ্জে ক্ষাভ টেকসই উন্নয়নে ফিলানথ্রপি উদ্যোগের ভূমিকা শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত রেলওয়েকে লাভজনক করতে উদ্যোগ চলতি বছরে জরিমানা আদায় ২২ কোটি টাকার বেশি তদন্তের মুখেও জৌলুশ বাড়ছে গণপূর্তের প্রকৌশলী স্বপন চাকমার দি ইবনেসিনা ফার্মাসিউটিক্যাল এর ৪১তমবার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত ২০২৫-২৬ কর বছরের আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় এক মাস বাড়ালো জাতীয় রাজস্ব বোর্ড

কাজ না করে অর্থ তুলে নেয়ার অভিযোগ আলোচনায় গণপূর্ত বিভাগ-৩ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মইনুল ইসলাম

#

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৫ আগস্ট, ২০২৫,  4:56 PM

news image


  কাজ না করেই কাগজে কলমে কাজ সমাপ্ত দেখিয়ে অর্থ লোপাটের অভিযোগ উঠেছে গণপূর্ত অধিদপ্তরের  নির্বাহী প্রকৌশলী থেকে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। গণপূর্ত বিভাগের সাথে সংশ্লিষ্টদের দেয়া তথ্যমতে, মে ও জুন মাসে তড়িঘড়ি করে গণপূর্ত অধিদপ্তর ঢাকা জোন ও ঢাকা মেট্রোপলিটন জোনের বিভিন্ন বিভাগে ২শত কোটি টাকারও বেশি খরচ দেখানো হয়েছে।

ভবন মেরামত, রং করাসহ আনুষঙ্গিক কাজ সম্পন্ন দেখিয়ে  যার মোটা অংকের টাকা লোপাট করার অভিযোগ  উঠেছে। সম্প্রতি সময়ে কাজ না করে বিল তুলে নিয়ে আলোচনার গণপূর্ত বিভাগ-৩এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মইনুল ইসলামজানা গেছে, ঢাকার সেগুনবাগিচায় হিসাব ভবনের ৭নং ব্লকের দ্বিতীয় তলায় করিডোরে টাইলস ও ফলস সিলিং লাগানো এবং বিভিন্ন কক্ষে রং নবায়ন কাজের জন্য ১১ লাখ টাকা বিল পরিশোধ করা হয়েছে গত জুন মাসে।

৬ মার্চ দরপত্র গ্রহণ, ১৪ মার্চ চুক্তি সম্পাদন এবং ১৭ মার্চ-২০২৫ চুক্তিবাস্তবায়ন দেখিয়েছেন ভবন মেরামত, রং করাসহ আনুষঙ্গিক কাজ সম্পন্ন দেখিয়ে। । কিšন্তু হিসাব ভবনের সংশ্লিøষ্ট ব্লকের কর্মকর্তা কর্মচারীরা জানান, গত মার্চ মাসে এ ধরনের কোনো কাজ হয়নি। এ ভবনে টাইলস এবং ফলস সিলিংয়ে কাজ হয়েছে কয়েক বছর আগে। 

সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে গণপূর্ত বিভাগ-৩ স্থাপনা মেরামত বা বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনার (এপিপি) মাধ্যমে ২১০টি কাজে ১১ কোটি টাকা ব্যয় করেছে, যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশই এ রকম কাজ না করে বা নামসর্বস্ব কাজ খাতা-কলমে দেখিয়ে বিল পরিশোধ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

গণপূর্ত অধিদপ্তরের সংশ্লিøষ্টরা জানিয়েছেন, মে মাসের শেষদিকে বা জুন মাসে কোনো প্রাক্কলন অনুমোদন হওয়ার পর দরপত্র আহ্বান করে সঠিকভাবে কাজ সম্পন্ন করা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সম্ভব নয়। তারপরও অর্থবছর শেষ হওয়ায় কাজ শেষ দেখাতে হয়েছে জুনের মধ্যে।

তা না করলে বরাদ্দ অর্থ সরকারের কোষাগারে ফেরত যাবে। এ কারণে বেশির ভাগ নির্বাহী প্রকৌশলীই গোঁজামিল দিয়ে বা কাজ না করেই কাগজে-কলমে কাজ সম্পন্ন দেখিয়ে ঠিকাদারকে বিল দিয়ে দিয়েছেন। ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ-৩ এর গত কয়েক বছরের এপিপির কাজ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রতিবছরই একই ধরনের কাজ দেখিয়ে ৯ কোটি থেকে ১০ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে।  এবার ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষদিকে ঢাকার সেগুনবাগিচায় অডিট কমপ্লেক্স ভবনের তৃতীয় তলায় বিভিন্ন কক্ষে টাইলস  ও ফলস সিলিং লাগানো এবং রং নবায়নসহ

আনুষঙ্গিক কাজের নামে ১৮ লাখ ৭৯ হাজার টাকা, অডিট কমপ্লেক্স ভবনের বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট অডিট অধিদপ্তরের বিভিন্ন কক্ষে ফলস সিলিং ও কাঠের দরজা লাগানো, রং নবায়ন কাজের জন্য ৯ লাখ টাকা, মশাবাহিত ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগের বিস্তাররোধে ঢাকার সেগুনবাগিচার কর অঞ্চল-৪ এর চত্বরে এডিস মশা নিধনের লক্ষ্যে ময়লা আবর্জনা অপসারণ কাজের জন্য ২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা এবং হিসাব ভবন চত্বরের আবর্জনা পরিষ্কারের জন্য ২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা, হিসাব ভবনের সিএএফও (কৃষি মন্ত্রণালয়) এর করিডোরের টাইসল ও ফলস সিলিং লাগানোর জন্য ১২ লাখ ৩১ হাজার টাকা,

হিসাব ভবনের বাইরের ৩টি লিফটের কয়েকটি গ্লাস পরিবর্তন, এসিপি স্থাপন কাজের জন্য ৮ লাখ ৯৯ হাজার টাকা এবং অডিট কমপ্লেক্স ভবনের বিভিন্ন ফ্লোরের ও সীমানা প্রাচীরের রং নবায়ন কাজ দেখিয়ে ৯ লাখ ১৯ হাজার টাকা বিল পরিশোধ করা হয়েছে।

সেগুনবাগিচায় হিসাব ভবনের সিএএফওর (স্বাস্থ ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়) কার্যালয়ের করিডোরে টাইলস ও ফলস সিলিং লাগানো, রং নবায়ন ও টয়লেট সংস্কারের নামে ১১ লাখ ১৭ হাজার টাকা এবং অডিট কমপ্লেক্স ভবনের বাণিজ্যিক অডিট অধিদপ্তরের অষ্টম ও নবম তলায় বিভিন্ন শাখা কক্ষে প্লাস্টার নবায়ন, রং নবায়ন, স্যানিটারি ফিটিংকসের জন্য ১৩ লাখ ৬৯ হাজার টাকা,

হিসাব ভবনের সিএএফওর (শ্রম মন্ত্রণালয়) কার্যালয়ের বিভিন্ন কক্ষে প্লাস্টার নবায়ন এবং নবায়ন স্যানিটারি ফিটিংস কাজের জন্য ২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। তেজগাঁওয়ে বাংলাদেশ ফরম ও প্রকাশনা অফিসের পুরুষ ও মহিলা নামাজ ঘরের জানালায় থাই গ্লাস লাগানোসহ স্যানিটারি নবায়নের জন্য ৭ লাখ ৫৫ হাজার টাকা, বাংলাদেশ জরিপ অধিদপ্তরের নতুন মহিলা টয়লেট , কোয়ার্টারের যাবতীয় সংস্কারের জন্য ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ হলের টাইলস লাগানোর কাজে ৩ লাখ ও হিসাব ভবনের সিএএফওর (ধর্ম মন্ত্রণালয়) কার্যালয়ের করিডোরে টাইলস ও ফলস সিলিং লাগানো

স্যানিটারি ফিটিংস পরিবর্তন ও রং নবায়ন কাজের ১৪ লাখ ১১ হাজার টাকা বিল পরিশোধ করা হয়েছে। অন্যদিকে ২০২১-২২ অর্থবছরে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের বাংলো-১এর দরজা, জানালায় থাই গ্লাস লাগানো, টাইলস বসানো, রং করা এবং কেন্দ্রীয় রেকর্ড ভবনের পয়ঃনিষ্কাশন লাইন মেরামত এবং গ্যারেজ কাম-ড্রাইভার কোয়ার্টারের নিচ তলায় গ্যারেজগুলোর সিলিং মেরামত, বিভিন্ন দরজা মেরামত, স্যুয়ারেজ লাইন মেরামত কাজের জন্য ১৯ লাখ ৮৭ হাজার টাকা ব্যয় করা হয়েছিল। অথচ গত জুন মাসে এই বাংলোর স্যুয়ারেজ লাইন সংস্কারের নামে ৫ লাখ ৩৫ হাজার টাকা বিল পরিশোধ করা হয়েছে। 

অভিযোগ রয়েছে অর্থবছরের শেষ মুহূর্তে অধিকাংশ কাজ না করেই ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ-৩ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মইনুল ইসলাম এবং ঢাকা গণপূর্ত সার্কেল-২ এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীসহ অন্য প্রকৌশলীরা কমিশনের বিনিময়ে বিল পরিশোধ করার নামে সরকারি টাকা লোপাট করেছেন। 

ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজশে কাগজে-কলমে কাজ সম্পন্ন দেখানো হয়েছেÑ যা সুষ্ঠু তদন্ত হলে বেরিয়ে আসবে। ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ-৩ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মইনুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে অভিযোগগুলো সঠিক নয় দাবি করে, তিনি এ বিষয়ে আর কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

একইভাবে ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ-৪, মেডিকেল গণপূর্ত বিভাগ, নগর গণপূর্ত বিভাগ, ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ-১ ও ২, মহাখালী ও মিরপুর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ও উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধেও এপিপির বরাদ্দ অর্থের এক-তৃতীয়াংশই কাজ না করে বা নামসর্বস্ব কাজ খাতা-কলমে দেখিয়ে বিল পরিশোধের অভিযোগ রয়েছে।

এছাড়া আরবিকালচার বিভাগের দায়িত্বে থাকা প্রধান বৃক্ষপালনবিদ শেখ মো. কুদরত-ই-খুদাও কাগজে-কলমে গাছ লাগানোর নামে অর্থবছরের শেষ মুহূর্তে কয়েক কোটি টাকার বিল পরিশোধ করেছেন। তিনিও গাছ লাগানোর জন্য প্রতিবছর গড়ে প্রায় ১০ কোটি টাকা পান। একাধিক ঠিকাদার অভিযোগ করেন গণপূর্তের মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ টাকা কমিশন দিতে হয়। 


logo

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ জাহিদুল ইসলাম