ঢাকা ০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম
Marriage Notice দূর্নীতির বহুমাত্রিক অভিযোগ জাতীয় গৃহায়ণ প্রশাসকের বিরুদ্ধে ২০২৬ সালে যাত্রা শুরু করছে ‘ডা: ইদ্রিস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল’ পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ এক লটে ৭০৩ সরঞ্জাম: দরপত্রে ক্রয় আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ সাজানো মিথ্যে মামলায় জেল হাজতে খোকন সেখ: ফরিদ গঞ্জে ক্ষাভ টেকসই উন্নয়নে ফিলানথ্রপি উদ্যোগের ভূমিকা শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত রেলওয়েকে লাভজনক করতে উদ্যোগ চলতি বছরে জরিমানা আদায় ২২ কোটি টাকার বেশি তদন্তের মুখেও জৌলুশ বাড়ছে গণপূর্তের প্রকৌশলী স্বপন চাকমার দি ইবনেসিনা ফার্মাসিউটিক্যাল এর ৪১তমবার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত ২০২৫-২৬ কর বছরের আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় এক মাস বাড়ালো জাতীয় রাজস্ব বোর্ড

তদন্তের মুখেও জৌলুশ বাড়ছে গণপূর্তের প্রকৌশলী স্বপন চাকমার

#

জাহিদুল আলম, ঢাকা

২৫ নভেম্বর, ২০২৫,  12:55 PM

news image


সরকারি অর্থ আত্মসাৎ ও নির্মাণকাজে ভয়াবহ জালিয়াতির এক নজিরবিহীন অভিযোগের কেন্দ্রে রয়েছেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী স্বপন চাকমা। সম্প্রতি এ প্রকৌশলীকেই রুটিন দায়িত্বে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর চার্জ দিতে যাচ্ছে অধিদপ্তরটি।

নজিরবিহীন একাধিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুদক-সহ তিন সংস্থার তদন্তের মধ্যেও তার পদোন্নতির বিষয়টি চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করছে সৎ প্রকৌশলীদের মধ্যে। তাছাড়া স্বপন চাকমার আলিশান জীবন-যাপন নিয়েও কৌতুহলের শেষ নেই অন্যসব প্রকৌশলীদের মধ্যে।

জানা গেছে, গণপূর্তের সংস্থাপন শাখায় নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে যুক্ত হয়েই স্বপন চাকমা জড়িয়ে পড়েন বদলী বাণিজ্যে। পূর্তের আলোচিত একটি সিন্ডিকেটের হয়ে প্রকৌশলী, উপ-সহকারী প্রকৌশলীসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলী করিয়ে তিনি হাতিয়ে নেন লক্ষ লক্ষ টাকা। প্রকৌশলী স্বপন চাকমার রাঙামাটিতে ছয়তলা আলিশান ভবন, ঢাকায় ফ্ল্যাট এবং গাজীপুরে এক বিঘা জমি কেনার তথ্যও ওঠে এসেছে অভিযোগে। অবৈধভাবে অর্জিত বড় অংকের টাকা তিনি ভারতে পাচার করছেন বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিশ্চুক গণপূর্তের একাধিক প্রকৌশলী।

অভিযোগ অনুসন্ধানে জানা গেছে, গাজীপুরের তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ নির্মাণ প্রকল্পে বালু ভরাট না করে তিনি একাই ৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন, এমন অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকসহ তিনটি সংস্থা তদন্ত করছে বলে জানা গেছে। স্বপন চাকমার দুর্নীতির ফলস্বরূপ, গাজীপুর তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজের একাডেমিক ভবন ও ছাত্রাবাসসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো মূল নকশার চেয়ে প্রায় ১০ ফুট নিচে নেমে গেছে বলে জানান হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট সূত্র। এই গুরুতর অভিযোগের ভিত্তিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং গণপূর্ত বিভাগ মোট তিনটি সংস্থা আলাদাভাবে অনুসন্ধান শুরু করেছে।

দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী ভূমি উন্নয়নকাজে বালু ভরাটের গড় গভীরতা ছিল ১৫ ফুট ৭ ইঞ্চি। কিন্তু তদন্ত সূত্র জানায়, সেখানে মাত্র তিন থেকে চার ফুট বালু ফেলে তড়িঘড়ি করে নির্মাণকাজ শুরু করা হয়। অথচ ১২ ফুট ভরাট দেখিয়ে ১২ কোটি টাকার বিল তুলে নেওয়া হয়। ওই বিলের অর্ধেকের বেশি অংশ, অর্থাৎ সাড়ে ছয় কোটি টাকা প্রকৌশলী স্বপন চাকমার পকেটে যায় বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে শরিয়তপুরে বদলী করা হলেও তিনি বিশেষ তদবিরে সংস্থাপন শাখায় ফের ফিরে আসেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মেডিকেল কলেজের একাধিক শিক্ষক নিশ্চিত করেন, নিম্নমানের কাজ ও বালু কম দেওয়ায় ভবনগুলোর দেয়াল, ভেতরের সিসি সড়ক ও ড্রেনে কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার আগেই ফাটল ধরেছে। ফাটল ঢাকতে সিমেন্টের প্রলেপ দেওয়া হয়েছে। ভবনগুলো এখন ভূমিকম্পে অতিঝুঁকিপূর্ণ বলেও জানান তারা। গত শুক্রবারের ভূমিকম্পে ভবনে থাকা সবার মধ্যেই আতঙ্ক সৃষ্টি হওয়ায় তারাহুরা করে ভবন থেকে নামতে গিয়ে অনেকে আহত হওয়ার খবরও পাওয়া গেছে।

অর্থ আত্মসাৎ ছাড়াও স্বপন চাকমা ঠিকাদারদের ওপর ঘুষের চাপ সৃষ্টি করতেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। এসএইচ জয়েন্টভেঞ্চারের স্বত্বাধিকারী মোনায়েম কবির অভিযোগ করেছেন, চূড়ান্ত বিল পাসের জন্য স্বপন চাকমা তাঁর কাছে ২৭ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। ঘুষ দিতে অস্বীকার করায় ‘সময়মতো কাজ সম্পন্ন হয়নি’ অজুহাতে মোনায়েম কবিরের কার্যাদেশ বাতিল করা হয়। বাধ্য হয়ে তিনি ২০২৩ সালের ১৯ জানুয়ারি গাজীপুর যুগ্ম জজ আদালতে অর্থ আদায়ে মামলা করেন।

এছাড়াও, কাশিমপুর কারাগারের আরসিসি রাস্তা মেরামতের ৬৫ লাখ টাকার কাজ না করে বিল তুলে আত্মসাতের অভিযোগও তার বিরুদ্ধে রয়েছে। তিনি ঢাকার আলোচিত ঠিকাদার জিকে শামীমের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে কাজ পাইয়ে দেওয়ায় অভিযুক্ত ১১ প্রকৌশলীর মধ্যেও একজন ছিলেন।

গাজীপুর দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির অভিযোগ আমলে নিয়ে দুদক এই অনুসন্ধান শুরু করেছে। দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা সাগর কুমার সাহা বলেন, “স্বপন কুমার চাকমার দুর্নীতির অনুসন্ধান চলছে এবং দ্রুতই প্রতিবেদন কমিশনে পাঠানো হবে।”

গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলী মো. খালেকুজ্জামান চৌধুরী নিশ্চিত করেছেন, অভিযোগের বিষয়ে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে এবং “দুর্নীতির সঙ্গে যারাই সম্পৃক্ত হবে, তাদের বিরুদ্ধেই অধিদপ্তর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।”

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বপন চাকমা এ প্রতিবেদককে বলেন, তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বেশির ভাগই মিথ্যা। তবে দুর্নীতি দমন কমিশন যেহেতু তদন্ত করছে তাই তিনি এর বেশি কিছু বলতে চান না।

উল্লেখ্য, স্বপন চাকমা গাজীপুর থাকাকালীন সময়ে ওই প্রকল্পের বিভিন্ন কাজের প্রাক্কলিত ব্যয়, কার্যাদেশে বরাদ্দের পরিমাণ, ব্যয় বৃদ্ধি হলে তার পরিমাণ, গত জানুয়ারি পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি, পরিশোধিত অর্থ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম-ঠিকানা, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিকের নাম ও মোবাইল ফোন নম্বর-এই সাত তথ্য চায় স্থানীয় এক সাংবাদিক।

গাজীপুর গণপূর্ত কার্যালয় থেকে আবেদনকারীকে বারবার প্রক্রিয়ায় ফেলে সময়ক্ষেপণ করে স্বপন চাকমা। শেষতক ১১ পৃষ্ঠা ফটোকপির মূল্য বাবদ যেখানে ২২ টাকা দরকার, সেখানে ৪৬ হাজার ৮০ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে তথ্য অধিকার আইনে আবেদনকারীকে ডাকযোগে চিঠি দিয়েছেন গাজীপুর গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী। বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিক মহলসহ ক্ষুদ গণপূর্ত অধিদপ্তরের সমালোচনার ঝড় ওঠে

logo

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ জাহিদুল ইসলাম