ঢাকা ০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম
Marriage Notice দূর্নীতির বহুমাত্রিক অভিযোগ জাতীয় গৃহায়ণ প্রশাসকের বিরুদ্ধে ২০২৬ সালে যাত্রা শুরু করছে ‘ডা: ইদ্রিস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল’ পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ এক লটে ৭০৩ সরঞ্জাম: দরপত্রে ক্রয় আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ সাজানো মিথ্যে মামলায় জেল হাজতে খোকন সেখ: ফরিদ গঞ্জে ক্ষাভ টেকসই উন্নয়নে ফিলানথ্রপি উদ্যোগের ভূমিকা শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত রেলওয়েকে লাভজনক করতে উদ্যোগ চলতি বছরে জরিমানা আদায় ২২ কোটি টাকার বেশি তদন্তের মুখেও জৌলুশ বাড়ছে গণপূর্তের প্রকৌশলী স্বপন চাকমার দি ইবনেসিনা ফার্মাসিউটিক্যাল এর ৪১তমবার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত ২০২৫-২৬ কর বছরের আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় এক মাস বাড়ালো জাতীয় রাজস্ব বোর্ড

দূর্নীতির বহুমাত্রিক অভিযোগ জাতীয় গৃহায়ণ প্রশাসকের বিরুদ্ধে

#

আয়েশা আক্তার মীম

৩০ নভেম্বর, ২০২৫,  2:28 PM

news image



* ৭৬ জনের নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ

* কমিশনে  টেন্ডারবিহীন কাজ প্রদান 

* নিজ দপ্তরে বসে বিশেষ সিন্ডিকেট সভা


জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) আলমগীর হুছাইন-এর বিরুদ্ধে দূর্নীতির বহুমাত্রিক অভিযোগ উঠেছে। গুরুতর কিছু অভিযোগের মধ্যে ৭৬জন লোকবলের নিয়োগে অনিয়ম, কমিশনে টেন্ডারবিহীন কাজ প্রদানসহ অসদাচরণও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাদ্যমে বহিরাগতদের নিয়ে নিজ দপ্তরে বেপরোয়া আড্ডা ও সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রেেণর মতো বিষয় রয়েছে। 

জাতীয় গৃহায়ণ অফিস সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়,  নিয়োগ বাণিজ্য, স্বজনপ্রীতি, নিয়ম লঙ্ঘন করে টেন্ডারবিহীন ঠিকাদারি কাজ প্রদান, আর্থিক লেনদেনে অপারগ কর্মকর্তাকে বদলি এবং ক্ষমতার একক কর্তৃত্ব খাটিয়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে এই বিতর্কিত কর্মকর্তা।  অফিস শেষে বহিরাগতদের নিয়ে নিয়মিত ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা চলে তার অফিস রুমে। সূত্র জানায়, ঘুষ ও দূর্নীতি বাণিজ্য নিজ বলযে রাখতে আলমগীর হুছাইন সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে  তদবির, প্লট ও ফ্ল্যাটের দায়মুক্তিসহ বিভিন্ন চুক্তির কাজ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এই চক্রে অফিসের  মাইন উদ্দিন, নিলয়, জয়নাল এবং খাইরুলসহ অনেকেই জড়িত। অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ সংগ্রহ বা ‘কালেক্টর’-এর দায়িত্ব পালনে তিনি অফিস সহায়ক নজরুল এবং ড্রাইভার মো. মাসুদকে ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

সূত্র বলছে,  সাময়িক অব্যাহতি বা চাকরিচ্যুতির শিকার কর্মচারীদের তদন্ত সাপেক্ষে সঠিক প্রতিবেদন দিতে তিনি আর্থিক সুবিধা দাবি করেন। তাকে আর্থিক সূবিধা না দিয়ে কেউ কোন কাজ করে যেতে পারে না। তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গেলেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে তিনি অসদাচরণ করেন। সূত্রমতে, ঢাকা অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের সহকারী পরিচালক একরামুল কবীর ঘুষ দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় কয়েকমাসের মধ্যে তাকে সিলেট বদলি করা হয়। ম্যানেজ মাস্টার হিসেবে  জাতীয় গৃহায়ন পরিচিত আলমগীর হুসাইন সাবেক প্রশাসক আতিউর রহমানকে সরিয়ে একসঙ্গে দুটি গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। 

প্রশাসকের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হওয়ায় নরসিংদীর এক ঠিকাদারকে নিয়ম লঙ্ঘন করে টেন্ডার ছাড়াই স্টেশনারি মালামাল সরবরাহ ও বিশ্ব বসতি দিবসের কাজ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। 


গৃহায়ন প্রকল্পে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ: ‘কনকচাঁপা’ প্রকল্পের ২৫৩টি রেডি ফ্ল্যাটের দায়মুক্তি-সহ নানা কাজের অনুমতি দেন আলমগীর হুছাইন। এই প্রকল্পের ফ্ল্যাটপ্রাপ্তদের দায়মুক্তি-সহ বিভিন্ন কাজের জন্য তাকে মোটা অঙ্কের টাকা দিতে হয় বলে অভিযোগ। যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হওয়ার প্রভাব খাটিয়ে তিনি এসব কাজে চুক্তিভিত্তিক লেনদেন করেন। এছাড়া, মিরপুর-১০ ব্লক বি সংলগ্ন বাণিজ্যিক প্লটে ২১ শতাংশের পরিবর্তে নিয়মবহির্ভূতভাবে ১৬ শতাংশ বিলম্ব ফি আদায় দেখানো হয়। রূপনগর গভ: হাউজিং এস্টেটে সমবায়ের নামে আবেদনের চেয়ে ৪.৮ শতাংশ জমি বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যার মূল্য প্রায় ৫ কোটি টাকা অতিরিক্ত।

*  নিয়োগে স্বজনপ্রীতি ও বাণিজ্য: জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষে ৯ম থেকে ১১তম গ্রেডের মোট ৭টি ক্যাটাগরির ১৬টি শূন্য পদে নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এই ১৬টি নিয়োগের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই তার সুপারিশে বিশেষ সুবিধায় নিয়োগ পেয়েছেন।কর্মচারী কন্যার নিয়োগ: জাতীয় গৃহায়ণের উচ্চমান সহকারী লতিফা আক্তারের মেয়েকে সহকারী স্থপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই নিয়োগের জন্য ‘মিষ্টি খাওয়ার’ নামে প্রায় ৭ লাখ টাকার চুক্তির অভিযোগ আছে।বৃহত্তর নিয়োগ বাণিজ্য: একইসাথে ১৩তম থেকে ২০তম গ্রেডের ১১টি শূন্য পদে আরও ৬০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে এদের ভাইভা চলমান। অভিযোগ উঠেছে, আলমগীর হুছাইন ভাইভা বোর্ডে তার পরিচিতদের বিশেষ সুবিধা দিচ্ছেন এবং এই পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া ঘিরে রমরমা বাণিজ্য করেছেন। বদলি বাণিজ্য: ঢাকার বাইরে বদলি এবং তাদের স্থলে ঢাকায় পোস্টিং পাওয়া কর্মকর্তাদের বেশিরভাগই আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে এই সুবিধা পেয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

 অভিযোগের বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য: এসব অনিয়ম-দুর্নীতি বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এ লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।জাতীয় গৃহায়ণ সচিব মন্দিপ কুমার এই অভিযোগগুলোর বিষয়ে বলেন, “আমরা অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখছি। যদিও অনেক অভিযোগই তার ব্যক্তিগত কাজের সাথে সম্পর্কিত, তবুও গৃহায়ণের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। জাতীয় গৃহায়ণকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে এবং এখানে অপরাধ যে-ই করুক, আমরা তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেব। জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) আলমগীর হুছাইন এই সমস্ত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও কাল্পনিক বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, “আমি নিয়োগের ভাইভা বোর্ডে আছি, এখন সব কথা বলতে পারছি না। এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, কাল্পনিক কথা।উচ্চমান সহকারী লতিফা আক্তার তার মেয়ের নিয়োগের বিষয়ে বলেন, “আমার মেয়েকে চাকরিতে যোগদান করিয়েছি, শুধু আমি হেরে যাব বলে। তা না হলে চাকরি করানোর কোনো ইচ্ছে ছিল না। জাতীয় গৃহায়ণ চেয়ারম্যান ফেরদৌসী বেগম বলেন, “সব নিয়ম মেনে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এসব নিয়োগে অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই। ৯ম থেকে ১১তম গ্রেডে ১৬ জন এবং ১৩তম থেকে ২০তম গ্রেডে ১১টি শূন্য পদে আরও ৬০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।”


logo

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ জাহিদুল ইসলাম