নিজস্ব প্রতিবেদক
২৯ নভেম্বর, ২০২৫, 8:31 PM
পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ এক লটে ৭০৩ সরঞ্জাম: দরপত্রে ক্রয় আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ
পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জন্য ৭০৩ ধরনের স্বাস্থ্য সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি কেনার উদ্দেশ্যে প্রায় ৭৬ কোটি ৭৫ লাখ ১০ হাজার টাকার একটি দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।
একই প্যাকেজে বিপুল সংখ্যক ভিন্ন ক্যাটাগরির পণ্য অন্তর্ভুক্ত করায় প্রকিউরমেন্ট আইন ও বিধিমালা লঙ্ঘিত হয়েছে এমন অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে সংশ্লিষ্ট মহলে।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, ভিন্নধর্মী সরঞ্জাম একত্রে প্যাকেজ করার পেছনে নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দেওয়ার উদ্দেশ্য থাকতে পারে। তাঁদের মতে, এ ধরনের উদ্যোগ অধিদপ্তর বা মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের অনুমোদন ছাড়া বাস্তবায়নের সুযোগ নেই।
দরপত্র প্রক্রিয়া এমনভাবে সম্পন্ন হলে সংশ্লিষ্টদের ভবিষ্যতে নিরীক্ষা আপত্তি এবং দুদকের মামলার মুখে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে।
অভিযোগের চিঠি সচিবের কাছে
গত ২ নভেম্বর ৭৬ কোটি টাকার দরপত্রে এসব গুরুতর অনিয়মকে কেন্দ্র করে একাধিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে। দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম এবং সচিব মো. সাইদুর রহমান লিখিত নির্দেশও দিয়েছেন। কিন্তু তারপরও এখনও এমন অনিয়ম রোধে কোনো তৎপরতা থামছে না।
চিঠিতে বলা হয়, ২৭ অক্টোবর আহ্বান করা দরপত্রে ছুরিুকাঁচি, ঘড়ি, টেলিভিশন, এক্সুরে যন্ত্র, অ্যানেসথেশিয়া যন্ত্রসহ ৭০৩টি আইটেম এক প্যাকেজে রাখা হয়েছে।
এতে যুক্ত করা হয়েছে নিম্নমানের স্পেসিফিকেশন, কিছু ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডুমডেল উল্লেখ, মাত্র দুই বছরের ওয়ারেন্টি এবং উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের অনুমোদনের বদলে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের অনুমোদনপত্র গ্রহণযোগ্য করার শর্তযা পিপিআর ২০২৫এর বিরোধী।চিঠিতে আরও অভিযোগ করা হয়, এত ভিন্ন ধরনের পণ্য এককভাবে সরবরাহ করতে বাংলাদেশের কোনো প্রতিষ্ঠানই সক্ষম নয়। ফলে দরপত্রটি প্রতিযোগিতাহীন হয়ে পড়বে এবং সরকারের বিপুল অর্থ অপচয়ের ঝুঁকি তৈরি হবে।
আগের অভিজ্ঞতা:
অভিযোগে বলা হয়, পূর্ববর্তী কয়েকটি ক্রয়ে নিম্নমানের পণ্যে ইউরোপ আমেরিকার নামি ব্র্যান্ডের স্টিকার লাগিয়ে সরবরাহের চেষ্টা হয়েছিল।
সেসব মালামাল গ্রহণে পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অনীহা দেখায়। এ ছাড়া ২০২৩ ২৪ অর্থবছরে সব নিয়ম অগ্রাহ্য করে ‘বাংলাদেশ সায়েন্স হাউস’কে ১০৫ কোটি টাকার কার্যাদেশ দেওয়ার ঘটনাও চিঠিতে স্মরণ করানো হয়।
টেন্ডার প্যাকেজে কী আছে
দরপত্র নথিতে দেখা যায়, চিকিৎসা যন্ত্রপাতি, ল্যাব সরঞ্জাম, অপটিক্যাল ও নির্ভুল যন্ত্র, ঘড়ি, ওষুধ, চিত্র গ্রহণ যন্ত্রপাতি, হেমাটোলজি, থেরাপি, অপারেটিং টেকনোলজি, অ্যানেসথেশিয়া রিসাসিটেশন সরঞ্জামসহ মোট ৭৬ কোটি টাকার সামগ্রী একই লটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এ লটে সিসিইউ বেড, কার্ডিয়াক মনিটর, হিমোডায়ালাইসিস মেশিন, পেশেন্ট মনিটর, পেশেন্ট টেবিলের পাশাপাশি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, এয়ার কুলার ও জেনারেটরও রয়েছে। দরপত্র মূল্যায়নের তারিখ নির্ধারিত হয়েছে ২৭ নভেম্বর।
প্রকল্প পরিচালকের বক্তব্য:
অভিযোগ বিষয়ে জানতে ফোন করা হলে প্রকল্প পরিচালক ডা. এস এম কবির হোসেন বলেন, অভিযোগ গেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষই দেখবেন। মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তর থেকে আমাকে এখনও কিছু জানানো হয়নি। পিপিআর লঙ্ঘন হয়েছে কি না প্রশ্ন শুনে তিনি বলেন বিষয়টি তিনি বুঝতে পারছেন না এবং নামাজের সময় উল্লেখ করে আর কথা বলতে চান না।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সাইদুর রহমান বলেন, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছেন। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, পিপিআর ২০২৫ অনুযায়ী প্রয়োজনভিত্তিক বিভিন্ন লটে ভাগ করে নতুন করে দরপত্র আহ্বান করলে প্রতিযোগিতা বাড়বে এবং অপচয় রোধ সম্ভব হবে।