নিজস্ব প্রতিবেদক
১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, 6:02 PM
বাংলাদেশ ইনসুলেটর সেনেটারি ফ্যাক্টরিতে হরিলুট : এমডি ও ম্যানেজার এডমিনের বিরুদ্ধে জাল জালিয়াতির অভিযোগ -০১
সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনসুলেটর সেনেটারি ফ্যাক্টরি ঘিরে গড়ে উঠেছে একটি হরিলুটের সিন্ডিকেট। মিরপুর চিড়িয়াখানারোডে অবস্থিত এ প্রতিষ্ঠানের সার্বিক কার্যক্রমেই অনিয়মকে নিয়মে পরিনত করেছেন নিয়োজিত কর্মকর্তারা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানের এমডি রেজাউল করিম ও ম্যানেজার এডমিন ফারুক হোসেনের প্রকাশ্য আর্শিবাদে সরকারি অর্থ আত্মসাৎসহ এর পরিচালনার সকল কাজে চলছে হরিলুটের উৎসব।
এমন একটি উদহরণ হচ্ছে, , ২০২৪ সালে এ কোম্পানিটি আউটসোর্সিং পদে জনবল নিয়োগের নিমিত্তে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগের দরপত্র আহ্বান করে।এখানে নিয়ম অনুযায়ী যে সকল শর্তবলি মেনে আবেদন করার কথা সে অনুযায়ী অনেক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আবেদন করেন। কিন্তু যোগ্য কোন প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়া হয়নি। তার বদলে ম্যানেজার এডমিন ফারুক হোসেন, এমডি রেজাউল করিম এর সহযোগিতায় জাল জালিয়াতির মাধ্যমে নিজেরাই কোম্পানী তৈরি করে “দেশী এন্টারপ্রাইজ ” নামে এক প্রতিষ্ঠানকে ২শত জনবল নিয়োগের দায়িত্ব দেয়া হয়। সূত্র বলছে, এ দেশী এন্টার প্রাইজ কোম্পানীটি একটি জালিয়াত কোম্পানী। এর কাগজপত্র, ঠিকানা,এমনকি ট্রেড লাইসেন্স সবই পরিকল্পিতভাবে জালিয়াতির উদ্দেশ্যেই তৈরী করা হয়েছে। যার মাস্টার মাইন্ড হচ্ছে ম্যানেজার এডমিন ফারুক হোসেন ও এমডি রেজাউল করিম।
শুধূ জাল জালিয়াতির মাধ্যমে কোম্পানী তৈরী করে কাজ দেয়া হয়নি, বরং এ কোম্পানীর মাঝ দিয়ে চাকুরি প্রার্থি প্রত্যেকের কাছ থেকে নেয়া হয়েছে আড়াই থেকে তিন লাখ করে নগদ অর্থ। অর্থাৎ দুইশত লোকের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে কয়েক কোটি টাকা। যা ভাগ বাটোয়ারা হয়েছে নিজেদের মাঝে। গণমাধ্যমের হাতে আসা তথ্য প্রমাণ থেকে দেখা যাচ্ছে, এই দেশি এন্টারপ্রাইজ-এর আয়কর সনদপত্র, ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন, অভিজ্ঞতার সনদ, ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট,সবকিছুই জাল। তথ্য ঘেটে দেখা যাচ্ছে, দেশি এন্টারপ্রাইজের ট্রেড লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয় ৩০ শে জুন ২০২৪, অথচ এই কোম্পানিকে নিয়োগদাতা হিসেবে দায়ত্বি দেয়া হচ্ছে ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে। অর্থাৎ যখন দেশী এন্টার প্রাইজকে কাজ দেয়া হয় তখন এ কোম্পানীর ট্রেড লাইসেন্স এর মেয়াদ ছিলো না।
সূত্র বলছে, দেশী এন্টার প্রাইজের মালিক মূলত, ম্যানেজার এডমিন ফারুক হোসেন। গণমাধ্যমের অনুসন্ধ্যানে এ কোম্পানির ট্রেড লাইসেন্সের মালিককে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ট্রেড লাইসেন্সে থাকা মোবাইল নাম্বার টি অন্য এক ব্যক্তির। অফিসের ঠিকানায় গিয়ে অফিসটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। জানা যায়, ফারুক হোসেনের নিজগ্রাম মানিকগঞ্জ থেকেই পরিচালিত হয় দেশী এন্টারপ্রাইজের কার্যক্রম।
একজন সরকারি কর্মকর্তা কোন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বা কোন লাভ জনক ব্যবসা-বাণিজ্যের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকতে পারেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গেছেন দপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তারা । নাম প্রকাশ না করার শর্তে, দপ্তরের একজন কর্মচারী গণমাধ্যমকে জানান, মূলত এই কোম্পানির মালিক ম্যানেজার এডমিন ফারুক হোসেন । যেহেতু ফারুক হোসেন এই নিয়োগ বোর্ডের সদস্য সচিব ছিলেন তাই তিনি নিজেই কাজ বাগিয়ে নিতে প্রতারণার আশ্রয় নেন। যা চাকুরি বিধির সু স্পষ্ঠলঙ্ঘন।
সূত্র ও বলছে, দেশী এন্টার প্রাইজকে যখন লোকবল নিয়োগের দায়িত্ব দেয়া হয়, তখন এই কোম্পানির পক্ষে দুর্নীতিবাজ ফারুক হোসেন নিজে সশরীরে ব্যাংকে উপস্থিত হয়ে পিজি জমা করেন। এসব কর্মকাণ্ড সম্পর্কে কোম্পানীর এম ডি রেজাউল করিমকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি অধিকাংশ প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান। একই বিষয়ে ফারুক হোসেনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি গণমাধ্যম কর্মিদের সাথে দেখা করেননি। মোবাইলে বার বার ফোন দিলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
সরকারি চাকুরির চেয়ারে বসে সেই প্রতিষ্ঠানের মাঝে সিন্ডিকেট গড়ে অর্থ লোপাটসহ জালিয়াতিতে জড়ানো সরকারি চাকুরি বিধির লঙ্ঘন হিসেবে মন্তব্য করেছেন টিআইবির ড. মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, এমন উম্মুক্ত প্রতারণার বিষয়ে দূর্নীতি দমন কমিশনের উচিৎ হবে তদন্তর মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।