বিশেষ প্রতিবেদক
৩১ আগস্ট, ২০২৫, 4:05 PM
বাগেরহাটে এখনো মিট মিট করে জ্বলছে জিয়া মেমোরিয়াল অরফানেজ ট্রাস্ট
বিশেষ প্রতিবেদক:
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল মৎস্যভান্ডার নামে খ্যাতবিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের উপকূলেরবাগেরহাটে এখনো মিট মিট করে আলো ছড়াচ্ছে জিয়া মেমোরিয়াল অরফানেজ ট্রাস্ট। জেলার সদর উপজেলার বেমরতা ইউনিয়নের ফতেপুর গ্রামে ৩.৯০ একর জমির ওপর ১৯৯৪ সালে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস এম মোস্তাফিজুর রহমান বাগেরহাটে জিয়া মেমোরিয়াল অরফানেজ ট্রাস্টের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
না যায়, শুরুতে ৩০ জন এতিম ও দুস্থকে নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি চালু হয় ২০০০ সালে। ৩ দশমিক ৯০ একর জমিতে করা ওই প্রতিষ্ঠানে ৫ কক্ষের অফিস ভবন, এতিম-দুস্থদের থাকার জন্য ৩০ শয্যাবিশিষ্ট দোতলা আবাসিক ভবন, ১৮ কক্ষের দোতলা প্রশিক্ষণ ভবন, একতলা ক্লিনিক ভবন, মসজিদ, পুকুর, দর্জিবিজ্ঞান প্রশিক্ষণ উপকরণ এবং ৮ জন কর্মকর্তা কর্মচারী সবই ছিল।
এলাকাবাসী জানান, তারা শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে ভালোবেসে এই জমি দান করেছিলেন। কিন্তু সেই অবস্থা এখন নেই । অনেকটাই অবহেলায় জীর্ণ হয়ে পড়েছে ট্রাস্ট। মিটি মিট করে আলো ধরে রাখার শেষ চেণ্টা করছে যেন।
দূর থেকে দেখলে মনে হবে জনমানবহীন কোন পুরনো পরিত্যক্ত বাড়ি। ভেতরে ভবনের ছাদ এবং দেয়ালের পলেস্তার খসে খসে পড়ছে। এখন মাত্র তিনজন দুস্থ রয়েছে। তারাও নিরুপায় ধুঁকছে। সঙ্গে আছে নামমাত্র প্রশিক্ষণ কর্মসূচী ও প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়। এভাবেই চলছে এখানে জিয়া মেমোরিয়াল অরফানেজ ট্রাস্টের কার্যক্রম।
প্রায় ৪ একর জমির ওপর গড়ে ওঠা এই প্রতিষ্ঠানটির ভগ্নদশা ও অব্যবস্থাপনায় সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বিএনপির ত্যাগী নেতা-কর্মীরাও হতাশ, ক্ষুব্ধ। গোটা ভবন নীরব-নিস্তব্ধ। নেই কারও সাড়াশব্দ। মাঝে মাঝে ভেসে আসে বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দ। দেয়ালের কিছু কিছু জায়গা থেকে খসে পড়েছে পলেস্তারা। কোথাও জমেছে শেওলা, কোথাও মাকড়সার জালের মতো শিকড় বিছিয়েছে পরজীবী উদ্ভিদ।
ভেঙে পড়েছে ছাদের রেলিং। জানালার গ্রিল মরিচার ভারে বিধ্বস্ত ভবনে প্রবেশে কাঠের দুই দরজার এক অংশ টিকে আছে অযত্ন-অবহেলায়। অন্য অংশের অস্তিত্বই নেই। ভবনের ভেতরে প্রবেশ করতেই গা শিউরে ওঠে। দরজার সামনে থেকে সোজা সিঁড়ি উঠে গেছে। ডানে-বামে কক্ষগুলোয় আবছা আলো। ভেতরের বেশির ভাগ দরজাই ভাঙা। মেঝেতে ময়লার স্তূপ। মনে হচ্ছিল এ যেন রূপকথার গল্পের ভূতের বাড়ি।
জানা যায়, চালুর পর ২০১১ সাল পর্যন্ত গড়ে ১৫ থেকে ২৫ জন এতিম ও দুস্থ শিশু নিয়ে চলছিল প্রতিষ্ঠানটি। এখানে একটি ক্লিনিক চালুর কথা থাকলেও তা আর হয়নি। ২০১০ সালে ওমান সরকারের অর্থায়নে প্রতিষ্ঠানটির সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করা হয়।
কিন্তু অভিযোগ আছে, তৎকালীন আওয়ামী লীগের অসাধু লোকজন সে অর্থ লুটেপুটে খায়। অভিভাবকশূন্যতায় এবং এলাকায় শিশুশ্রম বেড়ে যাওয়ায় দিনে দিনে প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। ২০১২ সালে ১২ জন, ১৩ সালে ১০ জন, ১৪ সালে ৬ জন, ১৫ সালে ৬, ১৬ সালে ৫, ১৭-১৮ সালে এই সংখ্যা ৩ জনে এসে দাঁড়িয়েছিল। বর্তমানে ২ জন দারোয়ান ছাড়া কেউ নেই।
ট্রাস্টি বোর্ডে কারা আছে তাও জানে না কেউ। এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে কয়েকটি ভবন। ১০ থেকে ১৮ বছর এতিম-দুস্থদের লালন-পালন ও স্বাবলম্বী করার জন্য এ প্রতিষ্ঠানে ৫ কক্ষের অফিস ভবন, এতিম-দুস্থদের থাকার জন্য ৩০ শয্যা বিশিষ্ট দোতলা আবাসিক ভবন, ১৮ কক্ষের দোতলা প্রশিক্ষণ ভবন, একতলা ক্লিনিক ভবন, মসজিদ, পুকুর, দর্জি বিজ্ঞান প্রশিক্ষণ উপকরণ এবং ৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী সবই ছিল।
২০০০ সালে ৩০ জন এতিম ও দুস্থদের নিয়ে শুরু হয় এটি। এরপর থেকে গড়ে ১৫ থেকে ২৫ জন এতিম ও দুস্থ নিয়ে ২০১১ পর্যন্ত চলছিল। কিন্তু কোনদিনই ক্লিনিকটি চালু হয়নি। তবে বর্তমানে দেখলে মনে হয় যেন ভূতের বাড়ি। শ্যাওলা পড়া ভবন।
ছাদের পলেস্তার খসে পড়ছে, যেন অভিভাবকহীন। এর মধ্যে ২০১০ সালে ওমান সরকারের অর্থায়নে প্রতিষ্ঠানটির সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করা হয়। অবিভাবক শূন্যতা এবং এলাকায় শিশুশ্রম বেড়ে যাওয়ায় প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। ২০১২ সালে ১২, ১৩ তে ১০, ১৪-তে ৬, ১৫-তে ৬, ১৬-তে ৫, ১৭-১৮ তে এ সংখ্যা ৩ জনে এসে দাঁড়িয়েছে। প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখতে ২০০৯ সালে প্রাক-প্রাথমিক এবং ২০১২ সালে মহিলাদের দর্জি বিজ্ঞান প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করে। প্রাক-প্রাথমিকে ৪ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুরা পড়ে। বর্তমানে ২২ জন শিশু রয়েছে। দর্জি বিজ্ঞান কোর্সে ১৫ জন শিক্ষার্থী আছে। দুস্থ হিসেবে থাকা জেলার কচুয়া উপজেলার পিংগুড়িয়া গ্রামের বেলা মল্লিকের ছেলে মুরাদ মল্লিক (১০) বলেন, একবছর আগে মাকে ছেড়ে বাবা চলে যাওয়ার পর আমাকে এখানে দিয়ে গেছে। সদর উপজেলার বিজয়পুর গ্রামের অলিয়ার রহমানের ছেলে মিলন শেখ (১১) বলেন, আব্বা খোঁজ নেয় না। মা মানুষের বাড়ি কাজ করে।
তাই আমি এখানে থাকি। পড়াশোনা না শিখতে পারলেও কাজ শিখছি। এতো দুরবস্থার মধ্যেও প্রতিষ্ঠানকে টিকিয়ে রাখতে চেষ্টা করছেন অধ্যক্ষ আফতাব আলম। তবে তিনি জানেন না এটা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের টাকায় চলে নাকি অন্য কারও অর্থায়নে চলে। তিনি বলেন, ২০০০ সালে আমি দায়িত্বে এসেছি।
তারপর থেকে প্রতি মাসে যে খরচ হয় তা স্যারের (সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস এম মোস্তাফিজুর রহমান) ছেলে পাঠাতো। এখন তিনি আমেরিকায় থাকেন। আমেরিকায় যাওয়ার পর থেকে স্যারের অ্যাকাউন্টেট হাসান সাহেব প্রতি মাসে খরচের টাকা পাঠান।
বর্তমানে প্রতি মাসে ৬০-৭০ হাজার টাকা খরচ হয়। তা হাসান সাহেব প্রতি মাসে কুরিয়ারে পাঠান। বর্তমান কার্যক্রম সম্পর্কে আফতাব আলম বলেন, বর্তমানে একজন করে অধ্যক্ষ, শিক্ষক, দর্জি বিজ্ঞান প্রশিক্ষক, ইমাম, বাবুর্চি ও ২ জন গার্ড আছে। শুরু থেকে এ পর্যন্ত ২৬২ এতিম ও দুস্থ এখান থেকে পড়াশোনা করে প্রশিক্ষণ নিয়ে গেছে। বর্তমানে তিনজন দুস্থ আছে। যাদের দর্জি বিজ্ঞান প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু আছে, সেখানে ২২ জন শিশু পড়াশোনা করছে।
নারীদের দর্জি বিজ্ঞান প্রশিক্ষণে ১৫ জন প্রশিক্ষণার্থী আছে। সকালে মসজিদে স্থানীয় শিশুদের কোরআন শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে এতিম ও দুস্থদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে চেষ্টা করছি।’ সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস এম মোস্তাফিজুর রহমানের ছেলে ব্যবসায়ী রিয়াজুর রহমানের প্রতিনিধি হাসান বলেন, রিয়াজুর রহমান স্যার প্রতি মাসে টাকা পাঠাতে বলেন তাই পাঠিয়ে দেই।
এর থেকে বেশি কিছু বলতে পারব না। প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখতে ২০০৯ সালে প্রাক-প্রাথমিক এবং ২০১২ সালে নারীদের জন্য দর্জিবিজ্ঞান প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করা হয়। প্রাক-প্রাথমিকে ৪ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুরা আসত দর্জিবিজ্ঞান কোর্সে। তখন ১৫ জন শিক্ষার্থী ছিল।
এলাকাবাসীর দাবি, অযোগ্য নেতৃত্বের কারণে এমন একটি প্রতিষ্ঠান ভূতের বাড়িতে পরিণত হয়েছে। এখন দেখাশোনার কোনো লোক আছে কি না তারা জানেন না। জমিদাতা এবং এলাকাবাসীর দাবি, যত দ্রুত সম্ভব নতুন করে ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করে প্রতিষ্ঠানটি চালুর।
তা না হলে তারা তাদের জমি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। সম্প্রতি এই প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শনে যান জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় দণ্ডভোগকারী জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মনিরুল ইসলাম খান। প্রতিষ্ঠানটি চালুর দাবিতে এলাকাবাসীর ও জমিদানকারীদের সঙ্গে মানববন্ধনে অংশ নেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মনিরুল ইসলাম খান বলেন, শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে ভালোবেসে মুসলমান ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা যে জমি দান করেছেন তা নজিরবিহীন। অথচ অদক্ষ ও অযোগ্য নেতৃত্বের কারণে আজ এটি ভূতের বাড়িতে পরিণত হয়েছে। তিনি জনগণের ভালোবাসায় গড়ে ওঠা এই ট্রাস্টের দায়িত্ব যোগ্যদের হাতে দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি অবিলম্বে চালুর জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।