জাহিদুল ইসলাম শিশির
২৩ নভেম্বর, ২০২৫, 12:08 PM
বুলেট ট্রেনের স্বপ্ন ও রেলওয়ে ডিজির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে
বুলেট প্রূফ টেনের যুগে পা রাখার স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। ঘন্টায় ৩শ কিলোমিটার গতিতে চলবে সে ট্রেন। মাত্র ৫৫ মিনিটে ঢাকা থেকে মানুষ পৌঁছুবে চট্ট্রগ্রামে! এই স্বপ্ন দেখা ও দেখানোর অপরাধে রেল ঘিরে আধিপাত্যবাদী শক্তির চরম রোষানলে পড়েছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক প্রকৌশলী আফজাল হোসেন।
সাম্প্রতিক সময়ে রেলওয়ে ডিজির বিরুদ্ধে ইনিয়ে বিনিয়ে নানাভাবে একটি মহল দূর্নীতি স্বজন প্রীতি আর অদক্ষতার গল্প শোনাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
গণমাধ্যমের অনুসন্ধ্যানী প্রশ্নের বহুমাত্রিক বিশ্লেষণে উঠে এসেছে গভীরে লুকানো এক সত্য। তা হচ্ছে শুধূ ডিজি আফজাল হোসন নন, বাংলাদেশ রেলওয়ে ঘিরেই চলছে এক সুগভীর ষড়যন্ত্র। যারা এ দেশের অর্থনীতির গতি পেছনে টানত চান, তাদের দোসররাই জড়িয়ে সেই ষঢ়যন্ত্রের সাথে।
রেলওয়ের সাথে জড়িত সূত্রগুলো বলছে, নানা ষঢ়যন্ত্র আর ভারতীয় আধিপাত্যবাদীদের সরাসরি বিরোধীতায় আটকে গিয়েছিল বাংলাদেশের বুলেটপ্রুফ ট্রেনের যুগে বাংলাদেশের প্রবেশের ফাইলটি। সে সময় সমস্ত নথি প্রস্তুত ছিলো, সম্ভাব্যতা যাচাইও শেষ, নকশাও চূড়ান্ত ছিলো।
বাকি ছিলো শুধু প্রধানমন্ত্রীর স্বক্ষর। সে অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে একের পর এক ফোন আসতে থাকে দিল্লি থেকে। বাংলাদেশে ৩শ কি.মি. স্পিডের বুলেট ট্রেন চাননা তারা। দাদাদের চাওয়ার বাইরে যাওয়ার সুযোগ ছিলোনা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর। সে কারণেই আটকে যায় বাংলাদেশের স্বপ্নের সে ফাইল।
বহু ফাইলের ভীড়ে চাপা পড়ে যায় সেই স্বপ্ন। ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ ইউনূস। আর চাপা পড়ে যাওয়া সেই স্বপ্নের ফাইল প্রফেসর ইউনুসের সামনে আনেন ডিজি আফজাল হোসেন। প্রধান উপদেষ্টার আগ্রহে আবার ফাইলে নড়াচড়া শুরু হয়।
এতেই গাত্রদাহ শুরু হয় ফ্যাসিস্ট সহচরও দেশ বিরাধী শক্তির। তারা যে কোন মূল্যে থামাতে চান ডিজিকে। শুরু হয় পুরনো ধাচের বয়ান। দূর্নীতির কল্পকাহিনী মেশানো গল্প আনা হয় সামনে। পর্দা দিয়ে ঢেকে দেয়ার চেষ্টা করা হয় ডিজির সময়ে রেলের ইতিহাসের উল্ল্যেখযোগ্য কাজগুলো।
সূত্র বলছে, ডিজির উদ্যোগে ও বর্তমান সরকারের আগ্রহে চীনের কর্মকর্তারা এখন বাংলাদেশের রেল মন্ত্রণালয়ের সাথে নিয়মিত বৈঠক করছেন। উদ্দেশ্য প্রতি ঘণ্টায় ৩শ কি.মি. স্পিডের বুলেট ট্রেন চালু করা। এখন বিশ্বকে দেখানোর সময় আমরাও বুলেট ট্রেনের যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছি।
যেখানে বর্তমানে চট্টগ্রাম যেতে সময় লাগে ৬ ঘণ্টা সেখানে তখন লাগবে মাত্র ৫৫ মিনিট। একসাথে এই বুলেট ট্রেন পরিবহন করতে পারবে ৫শ জন যাত্রী। সূত্র মতে, এই প্রকল্পের আওতায় হবে ৬টি স্টেশন। এগুলো হলো ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, ফেনী, পাহাড়তলী ও চট্টগ্রাম।
সুত্র বলছে, ডিজি আফজাল হোসন বেশ কিছু ভাল উদ্যোগ নিয়েছেন রেলকে আধুনিকায়ন আর দেশীয় স্বার্থ রক্ষায়। বিশেষ করে লোকোমোটিভ ট্রেন মেরামত ও ব্যবস্থাপনায় গতি আনতে তিনি গ্রহণ করেছেন কিছু উদ্যোগ। এতে বিশেষ একটি গ্রুপের স্বার্থে টান পড়েছে।
জানা যায়, লোকোমোটিভ মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশের ঘাটতির কথা বলা হচ্ছে। যা অনেকটাই পরিকল্পিত। অচলাস্থা সৃষ্টি করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে লোকোমোটিভ মেরামতোর কাজ দিতে মরিয়া একটি চক্র। ডিজি সে চক্রান্ত রুখে দিতে চান। ভেতরে এটাও তার বিরুদ্ধে চক্রান্তের একটি বড় কারণ।
সূত্র বলছে, পুরনো রেলপথের পুনর্বাসন ও আধুনিকীকরণ, পুরনো রেলপথগুলোকে আধুনিকী করণ করে সেগুলোর মানোন্নয়নসহ যাত্রীসেবার মানোন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিযেছেন ডিজি আফজাল হোসন। শতভাগ অনলাইনে টিকিট, উন্নত যাত্রী বিশ্রামাগার এবং পরিষ্কার পরিচছন্ন পরিবেশ নিশ্চিত করেছেন তিনি।
রেলওয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।এর মধ্যে রয়েছে (আরপিএফ) রেলওয়ে প্রটেকশন ফোর্স এর আধুনিকায়ন এবং নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিরাপত্তা নিশ্চিতে উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি।
এ ছাড়া নতুন নতুন ট্রেন সংযোজন করে যাত্রী পরিবহণ ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। আন্তঃনগর ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং কিছু নতুন রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। যমুনা রেল সেতুর কাজ সম্পন্ন করে ব্রিজের ওপর ডাবল লাইন চালু করা হয়েছে। এতে ব্রিজের উপর ট্রেনের গতি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সময় সাশ্রয় হচেছ। তাছাড়া কোন গতি নিয়ন্ত্রণ, লোড নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি প্রত্যাহার করা হয়েছে।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ২য় ফেইজ ভাংগা যশোর সেকশনে ৮৬ কি.মি. রেলপথ উদ্বোধন করা হয়েছে। ২০২৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর থেকে খুলনা ঢাকার জাহানাবাদ এক্সপ্রেস এবং ঢাকা-বেনোপোলের মধ্যে রূপসী বাংলা ট্রেন উদ্বোধন করা হয়ছে। ঢাকা-জয়দেবপুর, ঢাকা-নরসিংদী এবং ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে নতুন কমিউটার ট্রেন চালু করা হয়েছে। এছাড়া খুলনা ঢাকা এর মধ্যে পদ্মা সেতু হয়ে নবনির্মিত রেলপথে জাহানাবাদ এবং ঢাকা বেনাপোলের মধ্যে রূপসী বাংলা ট্রেন চালু করা হয়েছে।
সুষ্ঠু রেল ব্যবস্থাপনার ফলে বিগত দুইটি ঈদে ট্রেনের কোন শিডিউল বিপর্যয় এবং দুর্ঘটনা ট্রেন লাইনচ্যুতের ঘটনাও ঘটেনি। জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী সেকশনে ডাবল লাইন নির্মাণের জন্য জাইকা এর সাথে লোন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ফলে এই অংশে শীঘ্রই ডাবল লাইন নির্মাণ কাজ হওয়ার কথা । চট্টগ্রাম-দোহাজারী সেকশনে মিটারগেজ লাইনকে ডুয়েল গেজ এ রূপান্তর এর জন্য এডিবি এর সহায়তায় চট্টগ্রাম হতে দোহাজারী পর্যন্ত ডুয়েল গেজ রেললাইন নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।
কোরিয়ান অর্থায়নে কালুরঘাট এলাকায় বিদ্যমান পুরাতন রেল ব্রিজের উজানে একটি রেল কাম রোড ব্রীজ নির্মাণের জন্য ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। টিকিটের কালোবাজারি রোধ এবং শৃঙ্খলা আনায়নের লক্ষ্যে সকল স্টেশনে টিকিট চেকিং ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
অনলাইনে টিকিট কালোবাজারি রোধে বিশেষ মনিটরিং সেল গঠন করে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।বাংলাদেশ রেলওয়ের গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে অপারেটিং রেশিও ছিল ২.৫, বর্তমানে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে অপারেটিং রেশিও ২.০৯। এতে ব্যয় হ্রাস পেয়েছে তুলনামূলকভাবে অর্থ্যাৎ ব্যয় ও আয়ের পার্থক্য কমে এসেছে।
সূত্র বলছে এসব কাজের প্রত্যেকটিতেই স্বার্থন্বেষী মহলের স্বার্থ ক্ষুন্ন হওয়ায় পরিকল্পিতভাবে ডিজির বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নেমেছে মহল বিশেষ। কিন্তু সব কিছু ছাপিয়ে ডিজির ক্লিন ইমেজ সততা,দক্ষতা আর দেশের পক্ষে কাজ করার প্রত্যয় সরকারের উচ্চসহলের দৃষ্টি কেঁড়েছে বলে মনে করছেন রেলেওয়ের সাথে যুক্ত সংশ্লিষ্টরা।