বিশেষ প্রতিবেদক
১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, 4:14 PM
মানিকগঞ্জে ভ্যাট অভিযানে অনিয়মের অভিযোগ: তদন্ত কমিটি গঠন
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার ঘোস্তা বাজারের চান মিয়া স্টোরে অভিযান চালানো হলেও ভ্যাট চালানবিহীন ৫০ লাখ টাকার বেশি বিড়ি ও সিগারেট জব্দ হয়নি এবং মামলাও হয়নি। অভিযুক্তদের অফিসে ডেকে এনে চাঁদা-সমঝোতার মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি করার অভিযোগ উঠেছে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগীয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। ফলে আইন প্রয়োগ না হয়ে অভিযান শেষ হয়েছে সমঝোতায়।
এ তথ্য বিমেষ মাধ্যমে এনবিআর চেয়ারম্যানের দৃষ্টিতে আনা হলে ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হযেছে বলে জানা গেছে। সূত্রমতে, আগামীকাল বোরবার গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যদের ঘটনা স্থল পরিদর্শনের কথা রয়েছে।
জানা যায়, গত ৭ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে চারটার দিকে মানিকগঞ্জের বিভাগীয় কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে চান মিয়া স্টোরে অভিযান চালানো হয়। এ সময় সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (এআরও) অরবিন্দ মালি উপস্থিত ছিলেন। দোকানে বিউটি কোম্পানির বিপুল পরিমাণ ভ্যাট চালানবিহীন সিগারেট ও বিড়ি পাওয়া গেলেও নিয়ম অনুযায়ী তা জব্দ করা হয়নি। দোকান মালিককে পরদিন অফিসে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় এবং কোম্পানির প্রতিনিধিদেরও অফিসে যোগাযোগ করতে বলা হয়।
পরদিন দোকান মালিক চান মিয়া জানান, কোম্পানির নির্দেশে তিনি ভ্যাট অফিসে যাননি। অন্যদিকে সহকারী কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, “অভিযান তো করেছি। তবে বিড়ি-সিগারেট জব্দ করার বিষয়টি বুঝিনি।” তিনি স্থানীয় এক সাংবাদিক নেতাকে ফোন ধরিয়ে সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধও করেন।
ভ্যাটের নথি অনুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত মানিকগঞ্জ শহর ও আশপাশের বাজারগুলোতে অন্তত ছয়বার অভিযান চালানো হয়েছে। এর মধ্যে—১৩ মে খালপাড় এলাকায় এসএ পরিবহন থেকে ২২ কাটুন সিগারেট, ৩০ জুন আলামিন ও জনি স্টোর থেকে বিপুল পরিমাণ বিদেশি ও নকল সিগারেট, ৬ আগস্ট ও ২০ আগস্ট একই স্টোরে অভিযান চালিয়ে বিদেশি সিগারেট ও গত সপ্তাহে গিলন্ড বাজার থেকে ২২ কাটুন “টাইম চেঞ্জ” নামের সিগারেট জব্দ করা হয়।
নমুনা পরীক্ষায় দেখা গেছে বিউটি কোম্পানির বারবি, বিউটি গোল্ড, সেনোর গোল্ড ও ওশান ক্যাপ্টেন সিগারেটের—সবগুলোই নকল ব্র্যান্ডরোল।
আইনে বলা আছে, সিগারেটের স্ট্যাম্প বা ব্যান্ডরোল অথবা বিড়ির ব্যান্ডরোল নকল করে একজন উৎপাদনকারী মূসক ও সম্পূরক শুল্ক ফাঁকি প্রদান বা প্রদানের চেষ্টা করেন, সে বিবেচনায় এ ধরনের কর্মকান্ড সম্পাদনকারী কোন করদাতার বিরুদ্ধে ধারা-১১১ অনুযায়ী মামলা দায়ের করা যায়।
কিন্তু যেহেতু এ করদাতা স্ট্যাম্প বা ব্যান্ডরোল নকল করে মূসক ও সম্পূরক শুল্ক ফাঁকি দিয়েছেন তাই এ করদাতার বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইন, ১৯৭৪ এর ধারা-২৫ক মোতাবেক মামলা করা হতো। কেননা, এ আইনে এবিষয়ক অপরাধের বিষয়টি স্পষ্ট উল্লেখ আছে। এ ধারায় দায়ের করা মামলা প্রমাণিত হলে অপরাধী মৃত্যুদন্ড বা ১৪ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদন্ড বা জরিমানা বা উভয়দন্ডে দন্ডিত হতে পারেন।
নমুনা পরীক্ষায় সবগুলো ব্র্যান্ডরোল নকল প্রমাণিত হওয়া ও বিদেশি সিগারেট জব্দ করার পরও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো মামলা কিংবা কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, জব্দকৃত পণ্য দেখিয়ে অভিযুক্তদের অফিসে ডেকে এনে মাসিক চাঁদার বিনিময়ে সমঝোতা করা হয়।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সচেতন নাগরিকরা বলছেন, নিয়ম মেনে মামলা না হলে আইনের কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। তারা মনে করেন, সমঝোতার নামে গোপন চুক্তি চলতে থাকলে নকল ও ভ্যাট চালানবিহীন সিগারেটের বাজারজাতকরণ কখনোই বন্ধ হবে না।
এ বিষয়ে জানতে ফোন দিলে সহকারী কমিশনার শফিকুল ইসলাম দৈনিক কালের ছবিকে বলেন, ঘটনাটি আমার না বোঝার কারণে ঘটেছে। মালামাল জব্দ করার বিষয়টি আমার মাথায় আসেনি।