নিজস্ব প্রতিবেদক
২৬ নভেম্বর, ২০২৫, 11:20 PM
রেলওয়েকে লাভজনক করতে উদ্যোগ চলতি বছরে জরিমানা আদায় ২২ কোটি টাকার বেশি
টিকেট যার ভ্রমণ তার” নীতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেছে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে। রেল পরিবহনকে লাভজনক ও যাত্রীবান্ধব করতে বিভিন্ন উদ্যোগও গ্রহণ করেছেন পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক সুগুপ্ত গিন। তিনি পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের দায়িত্বে আসার পর থেকেই বদলে যেতে শুরু করে এই যাত্রা
বিভাগ। তার নেতৃত্বে যাত্রী সেবার মান উন্নয়ন, নিরাপত্তা বৃদ্ধি এবং অনিয়ম রোধে কঠোর নজরদারির ফলে রেলের প্রতি মানুষের আস্থা বেড়েছে। একই সঙ্গে বিনা টিকিটে ভ্রমণ রোধে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ২০২৫ সালের প্রথম ১০ মাসে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের টিকিট পরীক্ষক (টিটিই) ও সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে বিনা টিকিটের যাত্রীদের কাছ থেকে জরিমানা বাবদ আয় হয়েছে ২২ কোটি ৭৪ লাখ ৭১ হাজার টাকা। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি বলে জানা গেছে।
পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের দেওয়া তথ্যনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে টিটিই থেকে আয় হয়েছে ১ কোটি ৪৬ লাখ, ফেব্রুয়ারি মাসে ১ কোটি ৩৭ লাখ, মার্চ ১ কোটি ৪৬ লাখ, এপ্রিল ১ কোটি ৩২ লাখ, মে ১ কোটি ৩৭ লাখ, জুন ১ কোটি ৫ লাখ, জুলাই ১ কোটি ১৯ লাখ, আগস্ট ১ কোটি ৬১ লাখ, সেপ্টেম্বর ১ কোটি ৭২ লাখ, অক্টোবর ৯৮ হাজার টাকা রাজস্ব হয়েছে।
রেল কর্মকর্তারা মনে করছেন, নিয়মিত চেকিং এবং প্রযুক্তিনির্ভর টিকেটিং ব্যবস্থার উন্নয়ন যাত্রীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করেছে। ফলে বিনা টিকিটে ভ্রমণের প্রবণতা কমেছে এবং রেলের আর্থিক আয় বৃদ্ধি পেয়েছে।
রেলওয়ে বিভাগ জানায়, যাত্রীসেবা উন্নয়ন এবং রাজস্ব বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে নিয়মিতভাবে ট্রেনের কোচসমূহে টিকিট চেকিং টিম দায়িত্ব পালন করছে।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বিনা টিকিট, জাল টিকিট ও অনিয়মে জড়িত যাত্রীদের বিরুদ্ধে জরিমানা ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। পূবাঞ্চল রেলওয়ের সিসিএম মাহবুবুর রহমান বলেন,“আমরা পূর্বের তুলনায় রেলে টিকেট বিহীন যাত্রীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ জোরদার করেছি। আমাদের এই অভিযান চলবেই। আশা করছি যাত্রীরা সব নিয়ম মেনে টিকেট কেটে যাত্রা করবেন এবং রেলের সব নিয়মকানুন মেনে চলবে।”
রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, অনলাইনে টিকিট বিক্রির সুবিধা, কোচ নবায়ন, স্টেশন উন্নয়নের কাজ এবং নিরাপত্তা জোরদার করার কারণে যাত্রী সংখ্যা এখন অনেক বেশি। ক্রমবর্ধমান যাত্রী চাপ সামাল দিতে কিছু রুটে নতুন ট্রেন চালুর বিষয়টিও বিবেচনা করা হচ্ছে।
পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক সুগুপ্ত গিন বলেন,“রেলওয়েতে পূর্বে আর্থিক ক্ষতি বেশি ছিল। আমরা বর্তমানে রেলওয়ে কে লাভজনক হিসেবে পরিণত করতে কাজ করছি। পূর্বের তুলনায় এখন রেলওয়ে লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে উঠে আসছে। আমরা কিছু সুনিদির্ষ্ট উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।
যাত্রীদের নিরাপত্তা এবং আরামদায়ক যাত্রার কথা বিবেচনায় এগুলো উদ্যোগ কাজে আসছে।”
পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের নিয়মিত যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সড়কের যানজট ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়িয়ে রেলপথ এখন তাদের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম। বিশেষ করে দীর্ঘ দূরত্বের যাত্রায় ট্রেন সাশ্রয়ী ও দ্রুত ভ্রমণের সুবিধা দিচ্ছে। সেজন্য তারা অন্য বাহনের তুলনায় রেলওয়ের যাত্রায় প্রাধান্য দিচ্ছেন বেশি।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ আশা করছে, চলমান উন্নয়ন কার্যক্রম শেষ হলে যাত্রী ও রাজস্ব উভয়ই আরও বৃদ্ধি পাবে।