সিপন আহমেদ, মানিকগঞ্জ
০৫ নভেম্বর, ২০২৫, 4:20 PM
হার্ডওয়ার ইন্ডাস্ট্রিজ (বিডি) লিমিটেড- এর ৭৭ লাখ টাকা ভ্যাটের ৭০ লাখই ফাঁকি
মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার গোয়ালখালী এলাকায় অবস্থিত হার্ডওয়ার ইন্ডাস্ট্রিজ (বিডি) লিমিটেড নামের একটি চাইনিজ তালা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বিপুল পরিমাণ ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটি প্রতি মাসে প্রায় ৭৭ লাখ টাকার ভ্যাট দেওয়ার কথা থাকলেও মাত্র ৬ লাখ ৯৫ হাজার টাকা দিয়েছে, অর্থাৎ ৭০ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে।
হার্ডওয়ার ইন্ডাস্ট্রিজ (বিডি) লিমিটেড একটি চাইনিজ মালিকানাধীন কোম্পানি, যেখানে বিভিন্ন ধরনের তালা উৎপাদন করে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়। প্রতিষ্ঠানটি গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি শিবালয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করে। ওই বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে ভ্যাট নিবন্ধন নেয় প্রতিষ্ঠানটি। শুরুতে শ্রমিকের সংখ্যা ছিল মাত্র ৩১ জন, বর্তমানে সেখানে কাজ করছেন ৪০৯ জন শ্রমিক।
প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন চীনের নাগরিক ওয়াং ইউজিন। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শ্রমিকরা বেতন বৃদ্ধিসহ কয়েকটি দাবিতে আন্দোলনে নামেন। সে সময় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলেও সেনাবাহিনীর সহযোগিতা ও উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে তা নিয়ন্ত্রণে আসে।
চলতি বছরের আগস্টে প্রতিষ্ঠানটি বিদ্যুতের উচ্চ ভোল্টেজ সংযোগ পায়, এরপর থেকে উৎপাদন বেড়ে যায়। বর্তমানে কারখানাটির দুটি উৎপাদন সেকশন বা চুলা থাকলেও চালু রয়েছে কেবল একটি।
ভ্যাট ফাঁকির বিষয়টি সামনে আসে গত ২৪ সেপ্টেম্বর। ওই দিন সাভার ভ্যাট বিভাগীয় কার্যালয়ের উপকমিশনার সাজ্জাদ হোসেন প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শনে যান। তিনি কাগজপত্র ও উৎপাদন সংক্রান্ত তথ্য যাচাই করে দেখেন, প্রতিষ্ঠানটির মাসিক উৎপাদনের পরিমাণ প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা, যার ভিত্তিতে ভ্যাট দাঁড়ায় ৭৭ লাখ টাকা।
তবে প্রতিষ্ঠানটি তার আগের মাসে (১৫ সেপ্টেম্বর) দিয়েছে মাত্র ৪ লাখ ৮১ হাজার টাকা ভ্যাট। এরপর উপকমিশনার অক্টোবর মাস থেকে ৭৭ লাখ টাকা ভ্যাট প্রদানের নির্দেশ দেন। কিন্তু অক্টোবর মাসে প্রতিষ্ঠানটি দিয়েছে মাত্র ৬ লাখ ৯৫ হাজার টাকা, অর্থাৎ নির্দেশনা সত্ত্বেও প্রায় ৭০ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে।
ভ্যাট বিভাগ সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় ভ্যাট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই চলছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে উপ কমিশনার সাজ্জাদ হোসেন হঠাৎ কারখানা পরিদর্শনে গিয়ে ভ্যাটের বিশাল গড়মিল পাওয়ায় বিপত্তি সৃষ্টি হয়। তবে কারখানা কর্তৃপক্ষ পুনরায় ভ্যাট কর্মকর্তাদের সঙ্গে দরকষাকষি করে ম্যানেজের চেষ্টা চালাচ্ছেন।
সূত্র জানায়, কারখানার ভেতরে দুই শিপটে কাজ চলছে। একদিকে উৎপাদন বাড়ছে, অন্যদিকে সরকার পাচ্ছে না প্রাপ্য রাজস্ব। স্থানীয় সচেতন মহল বলছে, “এভাবে বিদেশি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান যদি আইন মানতে না চায়, তাহলে সরকারের রাজস্ব আয়ে বড় ধাক্কা লাগবে।”
ভ্যাট বিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা প্রাথমিকভাবে যে হিসাব পেয়েছি, তাতে প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত ভ্যাট প্রদানের পরিমাণের সঙ্গে ঘোষণার বিশাল গরমিল আছে।”
ভ্যাট ফাঁকির বিষয়ে হার্ডওয়ার বিডির মালিক ওয়াং ইউজিনের বক্তব্য জানতে কারখানায় গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে তাঁর দোভাষী মামুনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পরবর্তীতে জানাবেন। তবে এরপর আর কোনো যোগাযোগ করেননি। ফলে ওয়াং ইউজিনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
মানিকগঞ্জ বিভাগীয় ভ্যাট কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার শুভাশিস বোস এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট ঢাকা পশ্চিমের কমিশনার কাজী ফরিদ উদ্দীনের সরকারি নম্বরে একাধিকবার কল করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।