ঢাকা ০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম
Marriage Notice দূর্নীতির বহুমাত্রিক অভিযোগ জাতীয় গৃহায়ণ প্রশাসকের বিরুদ্ধে ২০২৬ সালে যাত্রা শুরু করছে ‘ডা: ইদ্রিস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল’ পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ এক লটে ৭০৩ সরঞ্জাম: দরপত্রে ক্রয় আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ সাজানো মিথ্যে মামলায় জেল হাজতে খোকন সেখ: ফরিদ গঞ্জে ক্ষাভ টেকসই উন্নয়নে ফিলানথ্রপি উদ্যোগের ভূমিকা শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত রেলওয়েকে লাভজনক করতে উদ্যোগ চলতি বছরে জরিমানা আদায় ২২ কোটি টাকার বেশি তদন্তের মুখেও জৌলুশ বাড়ছে গণপূর্তের প্রকৌশলী স্বপন চাকমার দি ইবনেসিনা ফার্মাসিউটিক্যাল এর ৪১তমবার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত ২০২৫-২৬ কর বছরের আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় এক মাস বাড়ালো জাতীয় রাজস্ব বোর্ড

টেকসই উন্নয়নে ফিলানথ্রপি উদ্যোগের ভূমিকা শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত

#

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৯ নভেম্বর, ২০২৫,  5:28 PM

news image


ব্যক্তিগত সহায়তা ও স্থানীয় ক্ষুদ্র ফিলানথ্রপি উদ্যোগই সমাজে মানবিক নিরাপত্তা ও সামাজিক সংহতি টিকিয়ে রাখে। দান-খয়রাত, যাকাত, সদকা, ওয়াক্ফ, শিক্ষা সহায়তা বা মানবিক সেবা- অভাবী মানুষের জীবনে তাৎক্ষণিক পরিবর্তন আনে এবং দীর্ঘমেয়াদে সমাজের উন্নয়নচক্রকে নীরবে এগিয়ে নেয়। এসডিজি অর্জনে জোড়ালো নীতি, আন্তর্জাতিক তহবিল যেমন প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন- মানুষের হৃদয়ের ছোট ছোট দয়ার কর্মকাণ্ড। উন্নয়ন শুধু বড় প্রকল্পের গল্প নয়; উন্নয়ন হলো মানুষের সদিচ্ছা ও ক্ষুদ্র দানের শক্তির গল্প।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক থট (বিআইআইটি) আয়োজিত “দ্য ইনভিজিব্ল হ্যান্ড অব ডেভেলপমেন্ট: রেকগনাইজিং দ্য হিডেন রোল অব স্মল-স্কেল ফিলানথ্রপি ইন অ্যাডভান্সিং দ্য সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস (এসডিজিস)” শীর্ষক সেমিনারের মূল প্রবন্ধে সৌদি আরবের কিং সালমান হিউম্যানিটারিয়ান এইড অ্যান্ড রিলিফ সেন্টারের সিনিয়র অ্যাডভাইজর ড. মোহাম্মদ মিল্লাতে মুস্তফা এসব কথা বলেন।

ঢাকার উত্তরাস্থ বিআইআইটি অডিটোরিয়ামে ২৯ নভেম্বর, শনিবার অনুষ্ঠিত সেমিনারে স্বাগত বক্তব্যে বিআইআইটি’র মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. এম. আবদুল আজিজ বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রাকে এগিয়ে নিতে অদৃশ্যমান ক্ষুদ্র দাতব্য কর্মকাণ্ড একটি নীরব ও অদৃশ্য শক্তি। এ শক্তিকে স্বীকৃতি দেওয়া ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া সময়ের দাবি। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকারি ও বেসরকারি ইসলামি এনজিও’র উদ্যোগকে সমন্বয় করতে হবে।

দাতব্য কাজ কীভাবে সমাজ উন্নয়ন ও এসডিজি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে এসব নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠান ভবিষ্যতেও অব্যাহত রাখা ও ইসলামি এনজিও’র ভূমিকা সংক্রান্ত গবেষণা পরিচালনার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তিনি।

ড. মোহাম্মদ মিল্লাতে মুস্তফা বলেন, কোনো বাবা তার সামর্থ্য অনুযায়ী প্রতিবেশীর বাচ্চার স্কুল ফি দেন, কেউ নিজের গ্রামের রাস্তায় আলোর জন্য একটি লাইট কিনে লাগিয়ে দেন, কোনো প্রবাসী আত্মীয় বছরে একবার কিছু পরিবারকে সাহায্য করেন- এসব উদ্যোগের খবর সংবাদে আসে না, রিপোর্টে ধরা পড়ে না।

তবুও এসব ক্ষুদ্র উদ্যোগ এসডিজি অর্জনে নীরব কিন্তু শক্তিশালী ভূমিকা রাখছে। একটি ছোট কর্মকাণ্ডও অন্য কোনো সেক্টরের কর্মকাণ্ডকে সমন্বিত উন্নয়নে বহুমাত্রিক ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে। একদিকে পরিষ্কার পানির ব্যবস্থা হলে স্বাস্থ্য উন্নত হয়, শিশুরা স্কুলে নিয়মিত যেতে পারে এবং মা–বোনেরা পানি সংগ্রহের সময় বাঁচিয়ে অর্থনৈতিক কাজে যুক্ত হতে পারে। একজন মানুষ যদি স্থানীয় মসজিদের মাইক ঠিক করে দেন- তা শুধু ধর্মীয় প্রয়োজনই পূরণ করে না; জরুরি ঘোষণাও দেওয়া যায়; দুর্যোগের সময় মানুষ সতর্ক হতে পারে।

একজন দোকানদার যদি প্রতি শুক্রবার ১০ জন অসহায় মানুষকে খাবার দেন বা দরিদ্রদের জন্য বিনামূল্যে খাবারের বাক্স রাখেন- তা অসহায় পরিবারের উপর চাপ কমায়। তাই ক্ষুদ্র দাতব্য কর্মকে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, স্থানীয় নেতৃত্ব ও স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে আরও কার্যকর এবং যথাযথ তথ্যপ্রযুক্তি, স্বচ্ছতা ও নীতি- সহায়তার মাধ্যমে আরও শক্তিশালী করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নে ছোট দানের বাস্তব প্রভাব রয়েছে। ক্ষুদ্র মাসিক সাহায্য অনেক পরিবারকে দরিদ্রতার ফাঁদে পড়া থেকে রক্ষা করে। নিয়মিত ওষুধ কেনার জন্য ছোট সাহায্য সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ নিশ্চিত করে এবং স্বাস্থ্যের বড় পরিবর্তন আনে। একটি শিশুর স্কুল ফি বা বই কিনে দেওয়া মানসম্পন্ন শিক্ষায় সহায়ক, যা শিক্ষার্থীর স্কুলে টিকে থাকার সম্ভাবনা বাড়ায় এবং পুরো জীবনপথ পরিবর্তন করে দেয়।

কেউ যদি গ্রামের একটি টিউবওয়েল দিয়ে নিরাপদ পানির নিশ্চয়তা দেয়, এটি পুরো মহল্লার রোগ কমিয়ে দেয়। সমাজের মূল উন্নয়নে ভূমিকা রাখলেও এসব ডেটায় ধরা পড়ে না। রিপোর্টিং সিস্টেম নেই। দাতারা নিজের পরিচয় দিতে চান না। স্থানীয় পর্যায়ে ঘটায় নীতিনির্ধারকেরা জানেন না। এজন্য সমন্বিত উন্নয়ন সফল করতে প্রয়োজন- কেন্দ্রীয় প্ল্যাটফর্ম, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি, স্থানীয় বাস্তবতা বোঝা এবং স্টেকহোল্ডারদের সম্পৃক্ত করা।স্থানীয় ব্যক্তি ও দাতাদের তথ্য নেটওয়ার্ক তৈরি করা।

ছোট দানকে উৎসাহিত করতে প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা। স্বচ্ছতা ও বিশ্বাস স্থাপনের ব্যবস্থা করা। মাইক্রো-ডোনেশনের প্রভাব পরিমাপ করার সহজ উপায় তৈরি করা। প্রতিবেশীর প্রতি দায়িত্ববোধ- সমাজের অদৃশ্য শক্তি। এগুলো রিপোর্টে নেই, কাগজে নেই, কিন্তু মানুষের জীবনে বাস্তব পরিবর্তন ঘটায়। 

প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও ইসলামিক স্কলার শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, ইসলাম দেড় হাজার বছর আগে এমন বিধান, শিক্ষা ও মেকানিজমের কথা বলেছে যা অধিকাংশ এসডিজির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ও পরস্পর সম্পর্কযুক্ত এবং লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সহায়ক।

সম্পদ ও পানির অপচয় রোধ করা ও পরিবেশের যত্ন নেওয়া- এই বিষয়গুলো ইসলামে গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামী অর্থনীতিও দারিদ্র্য হ্রাস ও টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করে। ইসলামের সুস্বাস্থ্য ও সুস্থতার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। ইসলাম প্রাকৃতিক সম্পদের যথাযথ ব্যবহার, সংরক্ষণ ও অপচয় নিষিদ্ধ করে। ইসলামের ইনসাফ ও ন্যায্যতার ধারণা সামাজিক স্থিতিশীলতা ও স্ব-ক্ষমতার উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে। 

সেমিনারে আলোচনায় অংশ নেন সেন্টার ফর যাকাত ম্যানেজমেন্ট (সিজেডএম) এর হেড অব অপারেশন কাজী আহমাদ ফারুক,  অরণ্যক ফাউন্ডেশন এর সাবেক নির্বাহী পরিচালক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (আইইউটি)

এর অধ্যাপক ড. শামসুদ্দিন আহমেদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ শাহাব উদ্দিন এবং মুসলিম এইড বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক মাহফুজুর রহমান চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন গবেষক, নীতি-বিশ্লেষক, উন্নয়ন কর্মী ও শিক্ষাবিদগণ।


logo

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ জাহিদুল ইসলাম