মো. আলমগীর হোসেন পলাশ
০৫ নভেম্বর, ২০২৫, 4:10 PM
“ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনই আমার রাজনীতির লক্ষ্য : ড. মো. হেলাল উদ্দিন
ঢাকা-৮ (শাহবাগ, রমনা, পল্টন, মতিঝিল ও শাহজাহানপুর) আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী অ্যাডভোকেট ড. মো. হেলাল উদ্দিন — একজন আইনজীবী, শিক্ষাবিদ, সমাজসেবক ও সংগঠক। দীর্ঘ রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি এবার ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন “ন্যায়ের প্রতীক দাঁড়িপাল্লা” নিয়ে। নির্বাচনের আগে তিনি এই একান্ত সাক্ষাৎকারে তার জীবনের অভিজ্ঞতা, ভাবনা ও অঙ্গীকার নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন।
প্রশ্ন: আপনার রাজনৈতিক জীবনের সূচনা কীভাবে হয়েছিল?
ড. মো. হেলাল উদ্দিন:
আমি ছাত্রজীবন থেকেই সমাজ ও দেশের জন্য কিছু করার অঙ্গীকার নিয়েই পথচলা শুরু করি। ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরে যোগ দিই। এরপর আজিজুল হক কলেজ সভাপতি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ও কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। ২০০৪ সালে জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দিয়ে আজ আমি কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য এবং ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। আমার রাজনীতি মূলত মূল্যবোধ, ন্যায় ও সেবার রাজনীতি।
প্রশ্ন: আপনি মূলত একজন আইনজীবী ও শিক্ষাবিদ — রাজনীতিতে আসার প্রেরণা কী?
ড.মো: হেলাল উদ্দিন
আইনজীবী হিসেবে আমি কাছ থেকে দেখেছি, কীভাবে সাধারণ মানুষ ন্যায়বিচার বঞ্চিত হয়। সেই বঞ্চনা দূর করার আকাঙ্ক্ষাই আমাকে রাজনীতিতে টেনে এনেছে। আমি বিশ্বাস করি, সুশাসন ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠন ছাড়া জাতির অগ্রগতি সম্ভব নয়। তাই রাজনীতি আমার কাছে ক্ষমতা অর্জনের নয়, বরং জনগণের অধিকার রক্ষার এক দায়িত্ব।
প্রশ্ন: আপনি দীর্ঘদিন রাষ্ট্রীয় নির্যাতন, মামলা ও কারাভোগ করেছেন—এ অভিজ্ঞতা আপনার মনোভাবকে কীভাবে প্রভাবিত করেছে?
ড. মো: হেলাল উদ্দিন
আমি নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশ নিয়েছি। অর্ধশতাধিক মামলায় হয়রানি, গ্রেফতার, রিমান্ড ও কারাবরণ করেছি। গুলিবিদ্ধ হয়েছি, জীবন-মৃত্যুর মুখোমুখিও দাঁড়াতে হয়েছে। কিন্তু এসব নির্যাতন আমার বিশ্বাসকে দুর্বল করতে পারেনি, বরং জনগণের অধিকারের লড়াইয়ে আমাকে আরও দৃঢ় করেছে।
প্রশ্ন: আপনি কীভাবে ঢাকা-৮ আসনকে উন্নয়নের মডেল হিসেবে গড়ে তুলতে চান?
ড. মো: হেলাল উদ্দিন
ঢাকা-৮ হচ্ছে রাজধানীর হৃদয়ভূমি। আমি এই আসনকে বিশ্বমানের “বিজনেস, অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ও কালচারাল ডিস্ট্রিক্ট”-এ পরিণত করতে চাই। দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন, স্বচ্ছ নাগরিক সেবা, আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থা, নিরাপদ সড়ক, সবুজায়ন ও ডিজিটাল সুযোগ—সব মিলিয়ে একটি স্মার্ট, মানবিক ও সুন্দর ঢাকা গড়াই আমার অঙ্গীকার।
প্রশ্ন: আপনার নির্বাচনী অঙ্গীকারের প্রধান দিকগুলো কী?
ড. মো: হেলাল উদ্দিন
আমার ঘোষণাপত্রে সাতটি অগ্রাধিকার রয়েছে—
১️. সুশাসন ও ন্যায়বিচার: নিরপেক্ষ বিচারব্যবস্থা ও কার্যকর সংসদীয় প্রতিনিধিত্ব।
২️. নিরাপত্তা ও সামাজিক সুরক্ষা: সন্ত্রাস, মাদক ও অপরাধে জিরো টলারেন্স।
৩️. স্বাস্থ্যসেবা: প্রতিটি ওয়ার্ডে নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও আধুনিক হাসপাতাল।
৪️. শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন: তরুণদের জন্য মানসম্মত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ।
৫️. কর্মসংস্থান: বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ, হাইটেক পার্ক ও নারী উদ্যোক্তা সহায়তা।
৬️. নগর উন্নয়ন: ফ্লাইওভার, আন্ডারপাস, স্মার্ট সিগন্যাল, পার্ক ও হকার জোন।
৭️. সংস্কৃতি ও পর্যটন: শাহবাগ–রমনা এলাকাকে ‘হেরিটেজ ট্যুরিস্ট জোন’-এ রূপান্তর।
প্রশ্ন: সমাজসেবায় আপনার ভূমিকা নিয়েও অনেকেই কথা বলেন…
ড. মো: হেলাল উদ্দিন
আমি বিশ্বাস করি, রাজনীতি মানে জনগণের সেবা। তাই আমি শিক্ষা, চিকিৎসা ও ত্রাণসেবার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। রাজধানী উন্নয়ন ফোরামের চেয়ারম্যান হিসেবে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। পল্টন কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি হিসেবে শিক্ষার মানোন্নয়নে কাজ করছি। এছাড়া করোনাকালীন সেবা, বন্যার্ত ও বস্তিবাসীদের সহায়তা, বৃক্ষরোপণ, খাল পরিষ্কার ও মাদকবিরোধী অভিযানে আমি সক্রিয় ছিলাম।
প্রশ্ন: ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবে আপনার ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাই…
ড. মো: হেলাল উদ্দিন
সেই আন্দোলনে আমি ঢাকার সম্মুখসারিতে নেতৃত্ব দিয়েছি। শাহবাগ, মতিঝিল ও পল্টন এলাকায় ছিলাম মাঠে। আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে শহীদ ও আহতদের পরিবারের পাশে গিয়ে সহযোগিতা করেছি। আমি বিশ্বাস করি, সেই বিপ্লব আমাদের জাতীয় চেতনায় ন্যায় ও পরিবর্তনের নতুন আশা জাগিয়েছে।
প্রশ্ন: ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে আপনার লক্ষ্য কী?
ড. মো: হেলাল উদ্দিন
আমার লক্ষ্য একটি ন্যায়ভিত্তিক, কল্যাণমুখী রাষ্ট্র গঠন — যেখানে দুর্নীতি, দমননীতি ও বৈষম্যের জায়গা থাকবে না। জনগণের ভোট ও ভালোবাসাই আমার শক্তি। আমি চাই, ঢাকা-৮ হোক উন্নয়ন, ন্যায় ও সৌহার্দ্যের মডেল আসন।
প্রশ্ন: ভোটারদের জন্য আপনার বার্তা কী?
ড. মো: হেলাল উদ্দিন
আমি জনগণের সন্তান, আপনাদেরই একজন। আমার রাজনীতি ক্ষমতার নয়, সেবার রাজনীতি। ন্যায়ের প্রতীক দাঁড়িপাল্লার পক্ষে আপনাদের দোয়া ও মূল্যবান ভোট চাই। ইনশাআল্লাহ, শাহবাগ, রমনা, পল্টন, মতিঝিল ও শাহজাহানপুরকে একটি উন্নত, মানবিক ও নিরাপদ এলাকায় রূপান্তর করবো।