হাবিবুর রহমান, আড়াই হাজার
০৩ নভেম্বর, ২০২৫, 7:55 PM
আড়াইহাজার জেনারেল হাসপাতালের অডিট নিয়ে অংশীজনদের দ্বন্দ্ব
নিজস্ব প্রতিবেদক ,আড়াইহাজার, নারায়ণগঞ্জ |
আড়াইহাজার জেনারেল হাসপাতালের চেয়ারম্যান পদ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র দ্বন্দ্ব। ২০১৩ সালের আগস্টে ১০০ শেয়ার নিয়ে যাত্রা শুরু করা হাসপাতালটি দীর্ঘদিন সুন্দর আলীর নেতৃত্বে পরিচালিত হলেও সম্প্রতি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আলী আকবরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে দেখা দিয়েছে বিভক্তি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি শেয়ারের মূল্য ৫০ হাজার টাকা। শুরুতে চেয়ারম্যান ছিলেন সুন্দর আলী, যিনি নিজেই ৪৭টি শেয়ারের মালিক। তাঁর কয়েকজন আত্মীয়ও হাসপাতালের অংশীদার। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত সুন্দর আলী ২০১৩ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন। সরকার পরিবর্তনের পর তিনি পালিয়ে যান।
পরিস্থিতি সামাল দিতে সকল শেয়ারহোল্ডারকে নিয়ে জুম মিটিং করেন সুন্দর আলী। সবার সম্মতিক্রমে আলী আকবরকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। আকবর শুরু থেকেই হাসপাতালের দুটি শেয়ারের মালিক। দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি হাসপাতালকে নতুনভাবে সাজানোর উদ্যোগ নেন। ডেকোরেশনের কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয় শেয়ারহোল্ডার আনোয়ার হোসেনকে, যার একটি শেয়ার আছে এবং তিনি স্থানীয়ভাবে থাই-গ্লাসের ব্যবসা করেন।
পুনর্গঠন ও সংস্কারের পর হাসপাতালের রোগী ও আয় দুই-ই বাড়তে থাকে। অংশীদারদের দাবি, আগে বছরে এক–দুই হাজার টাকা করে লভ্যাংশ পেতেন তারা, কিন্তু আলী আকবর দায়িত্ব নেওয়ার পর মাসে দুই হাজার টাকা করে লভ্যাংশ পাচ্ছেন।
এদিকে, আলী আকবরের ভাই অসুস্থ হয়ে নেপালে চিকিৎসাধীন থাকাকালে সুন্দর আলী তাঁর আত্মীয়দের নিয়ে গোপনে এক সভায় আলী আকবরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেন। পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলী আকবরকে বহিষ্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়।
এর আগে সুন্দর আলী নিজ উদ্যোগে একটি অডিট কমিটি গঠন করেন এবং আলী আকবরের দায়িত্বকালে কেনাকাটা ও ব্যয়ের ওপর ‘অনিয়ম’ অভিযোগ তোলেন। অডিট কমিটিতে সদস্য ছিলেন আনোয়ার হোসেনও—যার দোকান থেকেই হাসপাতালের ডেকোরেশনের সামগ্রী কেনা হয়েছিল এবং যিনি তদারকির দায়িত্বেও ছিলেন।
তবে একাধিক শেয়ারহোল্ডার বলেন, “আলী আকবরকে সকল অংশীদারের সম্মতিক্রমে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা হয়েছিল। তাঁকে বহিষ্কার করা হলে সেটিও সকলের মতামতের ভিত্তিতে হওয়া উচিত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘোষণা দিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া অগ্রহণযোগ্য।”
তারা আরও বলেন, “যদি অডিট করতেই হয়, তবে ২০১৩ সালে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার সময় থেকে অডিট করতে হবে। আমরা এতদিন বছরে দুই হাজার টাকা করে লভ্যাংশ পেতাম, এখন মাসে পাচ্ছি। তাহলে সুন্দর আলী আমাদের লাভের টাকা আত্মসাৎ করেছেন কি না, তাও তদন্ত হওয়া দরকার।”
বিষয়টি জানতে চাইলে আলী আকবর বলেন, “শুনেছি আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছে, কিন্তু এ সংক্রান্ত কোনো চিঠি পাইনি। অধিকাংশ শেয়ারহোল্ডার এখনো আমাকেই চেয়ারম্যান হিসেবে চান।”
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে সুন্দর আলীর মোবাইল নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।