নিজস্ব প্রতিবেদক
০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, 8:18 PM
শফিউর রহমান আইডিয়াল কলেজকে সরকারি দেখতে চায়এলাকাবাসী
নিজস্ব প্রতিবেদক
স্বাধীনতার ৫৪ বছর অতিক্রম করলেও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চরাঞ্চলে—যা স্থানীয়ভাবে ‘দিয়াড়’ নামে পরিচিত—গড়ে ওঠেনি একটি সরকারি কলেজও। এই চরাঞ্চলের আটটি ইউনিয়নে লক্ষাধিক মানুষের বসবাস হলেও শিক্ষা অবকাঠামোর ক্ষেত্রে সরকারি সহায়তা একেবারেই অনুপস্থিত। ফলে এখানকার শিক্ষার্থীরা এখনও উচ্চশিক্ষার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত।
এলাকার মানুষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে— কেন এত অবহেলা? কেন এত বৈষম্য? স্বাধীনতার অর্ধশতকেরও বেশি সময় পার হলেও কেন চরাঞ্চলে একটি সরকারি কলেজ কিংবা বিদ্যালয় স্থাপিত হলো না? এসব প্রশ্নের উত্তর আজও অজানা থেকে গেছে। অথচ চরাঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষ নদীভাঙন, বন্যা ও আর্থিক অস্বচ্ছলতার সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকে। এখানকার খেটে খাওয়া পরিবারগুলোর পক্ষে সন্তানদের শহরে পাঠিয়ে উচ্চশিক্ষা প্রদান করা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
এই বাস্তবতায়, চরাঞ্চলের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত সফিউর রহমান আইডিয়াল কলেজকে সরকারি করার দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন স্থানীয়রা। কলেজটি ইসলামপুর ইউনিয়নের সফিপুর গ্রামে, দ্বিতীয় মহানন্দা সেতুর (সাহেবের ঘাট) পার্শ্ববর্তী এলাকায় অবস্থিত। এই কলেজের অবস্থান এমন একটি কেন্দ্রীয় স্থানে, যেখানে চরাঞ্চলের অন্যান্য সাতটি ইউনিয়নের মানুষ সহজেই যাতায়াত করতে পারে। মহানন্দা নদীর ওপর নির্মিত সেতুটিই শহরের সঙ্গে সংযোগের একমাত্র পথ, যা কলেজটির পাশ দিয়েই অতিক্রম করেছে। ফলে এই কলেজটি পুরো চরাঞ্চলের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত।
স্থানীয়দের বক্তব্য অনুযায়ী, সরকারি কলেজ না থাকায় বহু মেধাবী শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা থেকে ঝরে পড়ছে। শুধুমাত্র আর্থিক সংকট ও দূরত্বজনিত কারণে তারা শহরে গিয়ে পড়ালেখা চালিয়ে নিতে পারছে না। অথচ এই কলেজটি যদি সরকারি করা হয়, তাহলে এখানকার ছেলে-মেয়েরা সহজেই সরকারি সুযোগ-সুবিধার আওতায় থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে। এই কলেজকে ঘিরে রয়েছে আশেপাশের আটটি ইউনিয়নের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা।
এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা প্রত্যাশা করেন— সরকার যেন শিক্ষার প্রতি বৈষম্য দূর করে এবং সফিউর রহমান আইডিয়াল কলেজকে সরকারি ঘোষণা দিয়ে চরাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের চাহিদা পূরণ করে। তাদের মতে, সরকারি শর্ত কিছুটা শিথিল করেও যদি কলেজটি সরকারীকরণ করা হয়, তবে তা হবে চরাঞ্চলের জন্য এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। এতে চরবাসীর সন্তানরা শিক্ষার আলো পাবে এবং উচ্চশিক্ষায় প্রবেশের পথ উন্মুক্ত হবে।
চরাঞ্চলের গরিব-দুঃখী, মেহনতি মানুষের স্বপ্ন পূরণে সরকারের প্রতি জোরালো আহ্বান জানিয়েছেন তারা। তাদের প্রত্যাশা— সরকার মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি বিবেচনা করে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং চরাঞ্চলের শিক্ষাবঞ্চিত জনগণের মুখে হাসি ফোটাবে।